ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বাদী হয়ে গতকাল রোববার সকাল ৯টায় বরগুনা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মুহাম্মদ মাহবুব আলম আবেদন গ্রহণ করে বেলা ১১টায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন। আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আখতার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলার আইনজীবী সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় মালিকসহ স্টাফদের গাফিলতি সুস্পষ্ট। আলোচিত এ ঘটনায় বাদী সংক্ষুদ্ধ হয়ে মামলার আবেদন করেছিলেন। আদালত আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে আদেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যে আমি নিশ্চিত হয়েছি মামলার আসামিদের গাফিলতির কারণে আগুন, মৃত্যু, আহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করেছি। এ কারণেই আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি করেছি। আমি এ মামলার আসামিদের দ্রুত গেফতারের দাবি জানাচ্ছি। প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে ৩৭ জনেরই বাড়ি বরগুনায়। এছাড়াও আহত রয়েছেন শতাধিক যাত্রী, নিখোঁজও আছেন অনেকে।
এদিকে ইঞ্জিন রুম থেকেই এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্মসচিব মো. তোফায়েল ইসলাম। গতকাল রোববার সকালে তিনি এ তথ্য জানান। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এখন পর্যন্ত লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্ঘটনা তদন্তে ২৪ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ) তোফায়ের ইসলামকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলে কমিটিকে তিন কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশের পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন, ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আলম, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার তাইফুর রহমান ভূইয়া, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূইয়া ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থার পরিচালক মামুন-অর-রশিদ। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রোববার সকালে কমিটির আহ্বায়ক তোফায়েল ইসলাম বলেন, তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটি দেখেছি। এখন আমরা তদন্ত টিম নিয়ে আছি বরগুনায়। জাহাজটি আসার কথা ছিল বরগুনায়, তাই যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন বরগুনার। বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বরগুনায় চলে এসেছেন। আমরা প্রত্যক্ষদর্শী লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলবো। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা মোটামুটিভাবে যেটা বুঝছি, সাসপেক্ট করা হচ্ছে ইঞ্জিন রুমে কিছু একটা ছিল। অগ্নিকাণ্ডের শুরু হয়েছিল ইঞ্জিন রুম থেকেই- প্রাথমিকভাবে সেটাই মনে হচ্ছে। যুগ্মসচিব বলেন, কারো কোনো গাফিলতি ছিল না, কোন ধরনের অনিয়ম ছিল- সবকিছুই আমরা দেখছি। গাফিলতি-অনিয়ম তো কিছু ছিলই। সেটা কার কতটুকু, কীভাবে হয়েছে তা দেখছি। আমরা কমিটি বসে সবকিছুই চিহ্নিত করবো। প্রজ্ঞাপনে কমিটিকে দুর্ঘটনাস্থল এবং দুর্ঘটনা কবলিত নৌযান পরিদর্শন করে ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ-১৯৭৬’ এর ৪৫নং ধারার ৩নং উপধারায় দেওয়া ক্ষমতাবলে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে শনাক্ত করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিতে হবে কমিটিকে।