ঢাকারবিবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২২
  • অন্যান্য

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ

জানুয়ারি ১৬, ২০২২ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ । ১৫৪ জন

ডেস্ক : দেশে গ্যাস সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে ঘাটতি আরো বাড়বে। শিগগির চাহিদার এক-চতুর্থাংশ গ্যাস জোগান দেয়া সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি সামলা দিতে কাতার ও ওমান থেকে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিমাণ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) কয়েকটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি দাম বাড়াানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তা বিধিসম্মত না হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে প্রস্তাব পাওয়ার পর শুনানি শেষে দাম বাড়ানোর বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। কারণ দেশে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে আপাতত আমদানির বিকল্প নেই। তাতে অনেক খরচ পড়বে। ফলে দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। জ্বালানি বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে দৈনিক ৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ২৫০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আর গত দুই-তিন বছর ধরে দৈনিক ৪১০-৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ৩১০-৩৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। অথচ গত ৯ জানুয়ারি ২৫৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গত ১৮ নভেম্বর সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মুরিং ছিঁড়ে যাওয়ায় টার্মিনালটিতে কোনো এলএনজিবাহী কার্গো ভিড়তে পারছে না। তাতে দৈনিক প্রায় ৪০-৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি মাসের শেষ বা আগামী মাসের শুরুর দিকে সেটি ফের চালু না হওয়া পর্যন্ত দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি কমানো যাবে না। তার মধ্যে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে কূপ সংস্কারের জন্য প্রতিদিন ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে ওই সংস্কার শেষ হলে আগের চেয়ে কিছু বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে চলতি জানুয়ারিতে গ্যাসের বিদ্যমান সংকটের তীব্রতা কমছে না। সূত্র জানায়, গ্যাসের সঙ্কটে কমে গেছে দেশের শিল্প উৎপাদন। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনসক্ষমতাও একৎতৃতীয়াংশে নেমে গেছে। ফলে শিল্প, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসহ শহর-গ্রামের নাগরিকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। উৎপাদনের চাকা ধীর ও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবহন খাতে রেশনিং করে সিএনজি সরবরাহ করায় বেড়ে গেছে যাতায়াতের খরচ। হ্রাস পেয়েছে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সার উৎপাদনও। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় ঢাকা মহানগর, সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ শিল্পকারখানা দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (প্রেশার পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে তিন-চার পিএসআই। তাতে কারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, নিটিং কারখানাগুলোর সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ঠিক সময়ে পণ্য দিতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা রপ্তানিকারকেরা ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি বিবেচনায় বর্তমানে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র গ্যাসের সংকট চলছে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি বছরে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং সারে ৭০ হাজার কোটি টাকার ভতুর্কি প্রয়োজন। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসের মজুত-উৎপাদন কমছে। আবার অনুসন্ধানেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধান নেই। তবে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান কাজ দ্রুততর করতে হবে। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের যে চ্যালেঞ্জ, তা যত দ্রুত সম্ভব কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় শুধু আমদানি করে সমস্যা নিরসন করা যাবে না। দাম বাড়িয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ার চূড়ান্ত প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে জমা দিতে যাচ্ছে দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং এলএনজি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ঘাটতি বেড়েছে। পরিস্থিতি উন্নতির সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকটি গ্যাসকূপের ওয়ার্কওভার (সংস্কার) শেষ হওয়ার পথে। সেগুলোতে উৎপাদন শুরু হলে এবং উৎপাদন বাড়লে সংকট কমবে। সামিটের এলএনজি ফের চালু হলেও সরবরাহ বাড়বে। সেক্ষেত্রে ওই খাতে সরকারের ভতুর্কি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।