আজ সোমবার বিকেলে বদলে যাওয়া পদ্মাপাড়ে গিয়ে ‘কক্সবাজারের স্বাদ’ পাওয়া গেল। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে রাকিবুল ইসলাম ও হোসেন আলী রাজশাহীতে বেড়াতে এসেছেন। তাঁরা কখনো কক্সবাজার যেতে পারেননি। তাঁরা বিচ বাইকে চড়তে চান। ১০০ টাকার টিকিট কিনে দুজনে বাইকে উঠে পড়েন, কিন্তু নিজেরা আর চালিয়ে যেতে পারেন না। শেষে পর্যন্ত চালকের সাহায্য নিয়ে তাঁদের পদ্মায় ভ্রমণ করতে হয়।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, নিজেরা চালাতে না পারলেও, তাঁরা খুব মজা পেয়েছেন। সপরিবার আরেকটি দলকে এই বাইকে ঘুরতে দেখা গেল। এই বাইক চালানোর জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
পানির কাছাকাছি নেমে গিয়ে দেখা যায়, ১০টি ছাতার নিচে পাতা ১০টি চেয়ারের একটিও খালি নেই। ২০ টাকা ভাড়ায় ছাতার নিচের চেয়ারে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বসে থাকা যাচ্ছে। রাজশাহী নগরের বহরমপুর থেকে রাবেয়া সুলতানা তাঁর চার বছরের ছেলে ও ভাবিকে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা এক ছাতার নিচের চেয়ারে বসে রয়েছেন। রাবেয়া বললেন, ‘আগে নদীর পাড়ে এলে বাচ্চা কোলে নিয়েই ঘুরতে হতো। মনে হতো, একটু বসলে শান্তি পাওয়া যেত, সেই শান্তির ব্যবস্থা ছিল না। এবার সেই ব্যবস্থা হয়েছে। ৪৫ মিনিট ধরে বসে আছি। বাচ্চাটা ঘুরেফিরে আবার এসে বসতে পারছে। সময়টা বেশ কেটে গেল।’
সিটি করপোরেশনের কর্মচারী মনিরুল ইসলাম টিকিট বিক্রি করছেন। বললেন, সবাই যে বসে থাকছেন, তা নয়। অনেকেই বসে ছবি তুলছেন। তাঁদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা চেয়ারগুলো পেতে রাখেন। বিকেল চারটা থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন।
রাজশাহী কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান রহমান একটি ছাতার নিচে গায়ের জ্যাকেটটা রেখে উদাস হয়ে বসে রয়েছেন। ২০ টাকায় এই বসে থাকা সার্থক মনে হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি দুবার বলেন, কমফোর্টেবল (আরামদায়ক)।
শিশু মুস্তাহিনা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সে তার মা নাজমুন্নাহার সঙ্গে এসে বসে রয়েছে। গৃহিণী নামজমুন্নাহার বললেন, ‘মেয়ের দাবি মেটাতেই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছি। ছাতার কারণে রোদটা চোখে লাগছে না। নিশ্চিন্তে বসে আছি। ভালো লাগছে।’
যে মা বাচ্চাকে নিয়ে ‘আয় আয় কক্সবাজার দেখাই’ বলে পদ্মার ঘাটের নিচে নামলেন, ভিড়ের মধ্যে পরে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে নদীতীরে দাঁড়িয়ে মানুষের দীর্ঘ সারির সঙ্গে রঙিন ছাতাগুলো কক্সবাজারের কথাই মনে করিয়ে দিল।
পদ্মাপাড়ের এই কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেছিলেন, রাজশাহীকে পর্যটনের নগর হিসেবে গড়ে তুলতে পদ্মাপাড় ঘিরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিচ বাইক ও চেয়ার চালু পদ্মাপাড়ের বিনোদনে একটি অনন্য মাত্রা যোগ হলো। এটি সূচনামাত্র। পদ্মাপাড়ে বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান।
মেয়র বলেন, রাজশাহীর পদ্মাপাড়কে এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মতো এখানেও ঘুরতে আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী দিনে নদীতে স্পিডবোট চালুসহ বহুমাত্রিক বিনোদনব্যবস্থার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রথম আলো