ঢাকারবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  • অন্যান্য

বগুড়ায় দুই নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ ৬:৫২ অপরাহ্ণ । ২১৫ জন

গ্রীনসিটি ডেস্ক:

বগুড়ায় দুই নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। শহরের বিসিক শিল্প নগরী এলাকার ‘মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’র মালামাল চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিনভর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড এবং দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- শাজাহানপুর উপজেলার হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা (৩৪), নারুলী তালপট্টি এলাকার সুমন ব্যাপারী (২৭) এবং একই এলাকার রাহাত (২১)। তাদের মধ্যে নিনজা মাছু ‘মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’র পিকআপ ড্রাইভার, রাহাত হেলপার এবং সুমন ওই দোকানের সাবেক কর্মচারী।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য তুলে ধরেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিসিক শিল্প নগরীর ‘মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’র সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে শামছুল হক (৬০) ও আব্দুল হান্নান (৪৫) নামে দুই নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শামছুল হকের বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান প্রতাপপুর এলাকায়। আর আব্দুল হান্নান বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা বড়সরলপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সুমন ব্যাপারী জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বগুড়ার সাতমাথার খোকন পার্কে সে, নিনজা ও রাহাত এক সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন সুমন তার আর্থিক দুর্দশার কথা তাদের জানায় এবং তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। টাকা না দিয়ে নিনজা বলে তাদের একটা কাজ করে দিলে ২ লাখ টাকা পাবে। কাজের বিষয়ে সুমন জানতে চাইলে তারা বলে যে, ভোরে বিসিক মাছু মেটালে (মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ) যেতে হবে। তখন সুমন বলে, সে কীভাবে মাছু মেটালে ঢুকবে। সে তো আর সেখানে কাজ করে না। তাকে তো সিকিউরিটিগার্ড আটকাবে। তখন নিনজা তাকে জানায়, সকালে তার মাল ডেলিভারি আছে। তাই মাছু মেটালের ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা সে করে দেবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সুমন মাছু মেটালের সামনে যায়। পরে তারা আরও দুইজন সহযোগীসহ মোট পাঁচজন সেখানে মিলিত হয়। সেখানে নিনজার সহায়তায় তারা মাছু মেটালের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর প্রথমে নাইটগার্ড হান্নানকে কৌশলে পানির হাউজের দিকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তাকে পানির হাউজের ভেতরে ফেলে দেয়। এরপর অপর নাইটগার্ড শামসুলকে ঘুম থেকে ডেকে কৌশলে একই জায়গায় নিয়ে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে একই হাউজে ফেলে দেয়। তারপর নিনজা নাইটগার্ড হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড সুমনকে দিয়ে গাজীপুর চলে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে হান্নানের মোবাইল থেকে তার পরিবারের কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবি করতে বলে।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাছু মেটালের ড্রাইভার নিনজা ওই দোকান থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বিক্রি করে আসছিল। এই বিষয়ে নিয়ে নাইটগার্ডদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তারা বিষয়টি মালিকপক্ষকে জানাতে চায়। পরে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিনজা তার সহযোগীদের নিয়ে সুকৌশলে নাইটগার্ড হান্নান ও শামসুলকে হত্যা করে তাদের অপহরণের নাটক সাজায়।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হবে।

জাগো নিউজ