ঢাকাবুধবার , ২ মার্চ ২০২২
  • অন্যান্য

বরেন্দ্র অঞ্চেলে পাতকুয়ার সুফল পাচ্ছে ২৩ হাজার ১০২জন সুবিধাভোগী

মার্চ ২, ২০২২ ৭:১২ অপরাহ্ণ । ২৩৬ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা।

হাতকল আসার আগে এ অঞ্চলের কৃষি ও সুপেয় পানির নির্ভরযোগ্য আধার ছিল ‘পাতকুয়া’। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাবমার্সিবল পাম্প, গভীর নলকূপসহ নানা প্রযুক্তির কাছে হারিয়ে যায় পাতকুয়া। তবে দীর্ঘদিন পর আবারও কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজের জন্য পাতকুয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রকৌশলীরা। এতে করে বরেন্দ্র আঞ্চলে সেচকাজসহ বহুমুখি ব্যবহার শুরু হয় পাতকুয়ার ।

পাতকুয়া হলো ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের নিচ পর্যন্ত গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন করে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার আধার। এসব পানি এলএলপির মাধ্যমে প্রথমে একটি ট্যাংকে তোলা হয়। তারপর সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি যাচ্ছে ঘর-গৃহস্থালী ও কৃষিজমির সেচকাজে। ফলে পাতকুয়ার চারপাশে মাটিতে এখন নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করা হচ্ছে নানা রকম ফসল।

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী আঞ্চলের পবা উপজেলা সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, নাচোল, গোমস্তপুর ও নওগাঁ জেলার সাপাহার,পোরশা, ধামাইরহাট, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর এবং মহাদেবপুর এ নয় উপজেলায় ৫৩৪৮ দশমিক ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরশক্তি চালিত ৪২০ টি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। এসব পাতকুয়া মাধ্যমে ১৩৭৮ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। যার মাধ্যমে বছরে ২৫ কোটি টাকার স্বল্প সেচের ফসলের আবদ সম্ভব হয়েছে।

কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলছেন, পাতকুয়াগুলোর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে। মহাদেবপুরের উপকারভোগী কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, গত মৌসুমে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে তিনি সৌরবিদ্যুত দিয়ে ফসলে সেচ দেয়ায় পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু, আবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে অনেক চাষীরা সেচ পাওয়ায় বেশ খুশি তারা।

পবা উপজেলার আরেক কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাতকুয়াগুলো সূর্যশক্তিতে চলার কারনে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহার প্রয়োজন না হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকছে, অন্যদিকে কোন খরচও নেই।

পোরশা উপজেলার মাজেদুল ইসলাম জানান, গত রবি মৌসুমে কৃষকদের পাশাপাশি তিনি নিজেও ৫ বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। সেইসঙ্গে অন্যরাও এর মাধ্যমে সবজি চাষে লাভবান হয়েছ।

নির্বাহী পরিচালক বিএমডিএর  প্রকৌশলী মো আব্দুর রশীদ বলেন, পাতকুয়া খননের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্পসেচে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বিএমডিএ। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শুরু হয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এর কার্যকারিতা অব্যাহত রয়েছে। আর এসব পাতকুয়ায় মাধ্যমে সুবিধাভোগ করছেন প্রায় ২৩ হাজার ১০২জন সুবিধাভোগী। পাতকুয়ার মাধ্যমে স্বল্পসেচের বিভিন্ন ফসল চাষে বিনামূল্যে সেচ সুবিধা পাওয়ায় উপকৃত হচ্ছে এসব উপজেলার হাজারো প্রান্তিক কৃষক।

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, পাতকুয়ার সুবিধা হল এখানে কোনো কৃষকের কাছ থেকে পানি খরচ নেওয়া হয় না। শুষ্ক মৌসুমে এটা খুবই কার্যকর। কৃষকবান্ধব সরকার কৃষকের জন্য নিত্যনতুন সেচের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। পতকুয়ার ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে এলাকার কৃষকদের মাঝে বেশ উৎফুল্ল বিরাজ করছে। এলাকায় এগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার হবে বলেও আমরা যথেষ্ট আশাবাদি।