ঢাকাশনিবার , ২৩ এপ্রিল ২০২২
  • অন্যান্য

ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে দুর্ভোগের শিকার বিদেশগামী কর্মী

এপ্রিল ২৩, ২০২২ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ । ১৮১ জন

‘সকালে হবে না, দুপুরের পরে। বিকেলে হবে না, আগামীকাল বৃহস্পতিবার আসেন। এদিনও হবে না রোববার (২৪ এপ্রিল) আসেন। তাহলে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিবো কবে? রোজা থেকে দিনের পর দিন এমন ভোগান্তি ভালো লাগে না!’

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর দু’টার দিকে রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সামনে এই ভাবে দুর্ভোগের কথা বলছিলেন বিদেশগামী কর্মী এসএম আসাদুল ইসলাম, ইউনুস আলী, মামুন হোসেন ও জামেদুল ইসলামে।

এর মধ্যে নাটোরের নলডাঙ্গার ইউনুস আলী বলেন, ‘ভাই আমি শুধু ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য আটকে আছি। ফিঙ্গার দিতে মাত্র দুই মিনিট লাগে। কিন্তু দুই দিনেও শেষ হচ্ছে না। আমার সৌদি আরবের কনস্ট্রাকশনের কাজে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিমানের টিকিট ইস্যু করা হয়েছে। শুধু ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য এখানে পড়ে আছি।’

নওগাঁর আত্রাইয়ের মামুন হোসেন জানান, ‘বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা হবে। স্যার বলছেন সার্ভারে সমস্যা। ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে না। এরপরে বিকেল তিনটায় কম্পিউটারের পিসি বাইরে পাঠানো হলো। গেটে আটকে দেয় প্রহরী। এরপরে স্যার নিজেই গিয়ে মেরামতের জন্য পিসি বাইরে পাঠায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বেলা ১১:৫৫ মিনিটে পিসি ঠিক করে নিয়ে আসা হয়। তার পরেও বিভিন্ন জটিলতায় নেওয়া যায়নি বিদেশগামী কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট।’

ফিঙ্গার দিতে না পারা বিদেশগামী কর্মীদের মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ওই অফিসের কর্মীদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সেবা প্রত্যাশীরা। এসময় অন্য সেবা প্রত্যাশীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে কাজের ধীরগতি। কর্মচারীদের ব্যবহার ভালো না। তারা বিদেশগামী কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করছেন।

অপর বিদেশগামী কর্মী এসএম আসাদুল ইসলাম জানান, ‘দুবাইতে গিয়েছিলাম ২০১৬ সালে। সেখানে ১২ বছর থাকার পরে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসি। তার পরে আর যাওয়া হয়নি। আমার বাড়ি বাগমারায় হলেও আমি ঢাকার সাভারে থাকি।

দুবাই যাবো সব কমপ্লিট (প্রস্তুতি সম্পন্ন)। বিমান বন্দর থেকে ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ফেরত দিয়েছে। ফিঙ্গার প্রিন্ট নিতে রাজশাহীতে আসি। তারা বললো মূল কাগজ আনতে। আবার ঢাকায় যায় কাগজ আনার জন্য। এরপরেও দুইদিন হলো ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে পারলাম না।’

নওগাঁর জামেদুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র পাঁচ মিনিটের কাজ। কিন্তু দুইদিন ধরে ঘুরতে হচ্ছে। সামনে ইদ; তারপরেও পরিবার পরিজনদের ছেড়ে সৌদি আরবে যাচ্ছি কাজের সন্ধানে। আমাদেরও তো খারাপ লাগে। বছরকার (ইদের দিন) দিনে পরিবার থেকে দূরে থাকবো। তিনি বলেন, রোজা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। এখানে বসার জায়গাও নেই।

বাড়িতে জমি বিক্রি কওে, ধার দেনা (ঋণ) করে বিদেশে যাচ্ছি। কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ঘুরতে হচ্ছে দিনের পর দিন। এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০ জন ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য আসেন। একদিন ফিঙ্গার প্রিন্ট বন্ধ থাকা মানে ২০০ জনের লাইন। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছইু করার নেই। আগামি ৩০ এপ্রিল যাত্রার তারিখ। টিকিটও কাটা হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে ফিঙ্গার প্রিন্টসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে টিকিটের টাকা লোকসান যাবে।’- সোনার দেশ

রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহা. আব্দুল হান্নান জানান, সার্ভারের সমস্যা থাকার কারণে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। প্রযুক্তিগত ত্রুটি সমাধান হলে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে। সর্বশেষ বিকেলে ৩:৫৫ মিনিটে বিদেশগামী কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।

Paris