ঢাকাবুধবার , ৬ জুলাই ২০২২
  • অন্যান্য

২৯ বছরে চারবার নদীগর্ভে রাজশাহীর যে স্কুল

জুলাই ৬, ২০২২ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ । ১৭১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:


২৯ বছরে চারবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে রাজশাহীর বাঘার চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন শ্রমিক সংকটে স্কুল তৈরির কাজ করা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পরে ভাঙন আতঙ্ক মাথায় নিয়ে পারি দিলো এতোগুলো বছর। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নদীগর্ভে বিলীনের পরে সর্বশেষ ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয় বিদ্যালয়টি। পুনর্নির্মাণের পর বিদ্যালয়টিতে চার মাসও ক্লাস নেয়া সম্ভব হলো না।

এখন পদ্মার ভাঙ্গনের ক্ষতি এড়াতে বিদ্যালয়টি ভেঙে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ি রাখা হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে সেখানেই ক্লাস নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পরে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয় বিদ্যালয়টি। এরপরে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। আবার অন্য জায়গায় বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ করা হয়। সেই জায়গায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ভাঙনের কবলে পরে। সেবছর দু’তোলা ভবন পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপরে আবারও বিদ্যালয়ের পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। তবে করোনার কারণে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করানো সম্ভব হয়নি বিগত বছরগুলোতে। করোনা কমায় সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ মার্চ নতুন স্কুলটিতে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু চার মাসও পাঠদান সম্ভব হয়নি নতুন ভবনে। এখন পদ্মার ভাঙনে বিলীন হতে যাওয়া বিদ্যালয়টি থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঈদের পরে শ্রমিক দিয়ে ভাঙা হবে নতুন বিদ্যালয় ভবন।

সূত্র আরও জানায়, চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সর্বশেষ ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়। এই বিদ্যালয়টিতে ১৪১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে প্রাক প্রাথমিকে ১০ জন, প্রথম শ্রেণিতে ২০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৪০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। প্রাক প্রাথমিকসহ ছয় শ্রেণিতে পাঠদান করান স্কুল প্রাধানসহ তিনজন শিক্ষক। তবে একজন গেস্ট শিক্ষক এখানে ক্লাস নেন।

চকরাজাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে মাত্র ৫ মিটার দূরে রয়েছে স্কুলের ভবন। যেকোনো সময়ে পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে স্কুলটি। এখনও সময় আছে, স্কুল রক্ষা করতে হলে বাঁধ নির্মাণ অতি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, স্কুল ভবনটি ভেঙে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ঈদের পরে শ্রমিকরা স্কুলটি ভেঙে সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযমের বাড়িতে স্থানান্তর করা হবে। সেখানেই ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এক কথার উত্তরে তিনি জানান, এলাকায় খাস জমি রয়েছে। সেখানে ৪৬ শতংশ জমির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন দেয়া আছে। তিনমাসেও কোন ব্যবস্থা হয়নি। বিষয়টি চেয়ারম্যান রাজশাহী জেলা প্রশাসককে জানিয়েছে। আশা করছি অতিদ্রুতই স্কুলের জায়গার ব্যবস্থা হবে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিএম বাবলু দেওয়ান বলনে, চরের মানুষ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় বিদ্যুৎ পেয়েছে। ব্রিজও পেতে যাচ্ছে। রাস্তাও পেয়েছিলাম। কিন্তু ভাঙনে রাস্তা পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। এখন একটিই দাবি বাঁধ নির্মাণের। প্রাইমারি স্কুলটি ভাঙনের মুখ পড়েছে। অতিদ্রুত সরিয়ে না নিলে পদ্মা গর্ভে চলে যাবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মামুনুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি বুঝে স্কুল সরিয়ে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

Paris
Paris