নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী মাসেই কাতারে বসতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপের এবারের আসর। শিরোপার জন্য লড়বে ৩২টি দেশ। কার হাতে ট্রফি উঠবে তা সময়ই নির্ধারণ করে দেবে। কিন্তু তার আগেই যেন বিশ্বকাপ ট্রফি যেন চলে এসেছে রাজশাহীতে!
এ বছর বিশ্বকাপ খেলা, তাই শারদীয় দুর্গাপূজায় ফুটবল বিশ্বকাপের থিমেই সাজানো হয়েছে পূজামণ্ডপটি। শহরের রাণীবাজার মোড়ে প্রতিবছরই ব্যতিক্রম থিমে মণ্ডপ সাজায় টাইগার সংঘ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মণ্ডপের ওপরের অংশে শোভা পাচ্ছে বিশ্বকাপের ট্রফি। আয়োজকরা জানান, ট্রফিটি ২৬ ফুট উঁচু ও ১০ ফুট চওড়া। আসন্ন কাতার বিশ্বকাপের ট্রফির আদলেই এটি বানানো হয়েছে। ট্রফির চারপাশে বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া ৩২ টি দেশের পতাকাও শোভা পাচ্ছে। আর পতাকার মাঝখানে রয়েছে ট্রফিটি।
ট্রফির ঠিক ওপরেই আছে বাংলাদেশের পতাকা। একটু পাশেই একতার প্রতীক হিসেবে ১১ জন খেলোয়াড়ের অবয়ব দিয়ে বানানো হচ্ছে একটি পৃথিবী। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জার্সি পরানো আছে খেলোয়াড়দের গায়ে। তাদের পায়ের নিচে সবুজ ঘাসের গালিচা। এর পাশেই একটি গাছে শোভা ছড়াচ্ছে রং বেরংয়ের আলোকসজ্জা।
গত ৭ বছর ধরেই টাইগার সংঘের পূজা মণ্ডপ থাকে রাজশাহীর মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতি পূজার সময় ভিন্ন ভিন্ন থিম নিয়ে মণ্ডপ সাজানোর জন্য সবাই দেখতে আসেন সেটি। ১৯৮২ সালে টাইগার সংঘ নাম দিয়ে এই পূজা মণ্ডপের যাত্রা শুরু। দীর্ঘ ৪০ বছরের মধ্যে তিনবার এই পূজা মণ্ডপের স্থান পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন থিম নিয়ে টাইগার সংঘ মণ্ডপ সাজাচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে। সেবার বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘের মুখের আদলে মণ্ডপটি সাজানো হয়।
প্রথম বছরেই দর্শনার্থীদের দারুণ সাড়া পায় তারা। তারপর থেকেই একের পর এক থিম নিয়ে তারা সাজাতে থাকেন মণ্ডপ। বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর থিমের আদলেই মণ্ডপটি সাজানো হয়।
দ্বিতীয় বছর ২০১৭ সালে বাহুবলী সিনেমার আদলে বানানো হয় মণ্ডপ। এরপর ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আদলে বানানো হয়। সেবারও দারুণ সাড়া পান আয়োজকরা। এর পরের বছর ২০১৯ কিংবদন্তী গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর রূপালী গিটার দেখা যায়। ২০২০ সাল আলোচিত ছিল অতিমারী করোনায় জন্য। তাই এবার মণ্ডপে জায়গা করে নেয় করোনার আদল। তবে ২০২১ সাল ছিল ব্যতিক্রম। এ বছর তারা একবারেই সাদামাটা ধাচের মণ্ডপ তৈরি করে। দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে এবার তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে নিয়ে আসা হয়েছে বিশ্বকাপের ট্রফির আাদল।
টাইগার সংঘের কার্যকরী সভাপতি সুশীল কুমার আগারওয়ালা বলেন, ‘আমাদের এই মণ্ডপ ঘিরে সবার অনেক প্রত্যাশা থাকে। গতবার সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। তাই এবার হতাশ করতে চাই না। এবার ট্রফিটি নির্মাণ করতে আমাদের ব্যায় হচ্ছে প্রায় আট লাখ টাকা। আমাদের নিজেদের এবং বিদেশে থাকা বন্ধু-বান্ধবদের অনুদানের টাকায় এটা করা হচ্ছে। আশা করছি, সামনের বছর আবার নতুন কোন থিম নিয়ে সাজাতে পারবো মণ্ডপ।’
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি তপন কুমার সেন জানান, রাজশাহীতে এ বছর ৪৫০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। এরমধ্যে মহানগরীতে রয়েছে ৭৬টি মণ্ডপ ও ৯টি উপজেলায় ৩৭৪টি। এরমধ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলায় মণ্ডপ রয়েছে ১৮টি, গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩৯টি, তানোর উপজেলায় ৬০টি, মোহনপুর উপজেলায় ২২টি, বাগমারা উপজেলায় ৮০টি, দুর্গাপুর উপজেলায় ১৭টি, পুঠিয়া উপজেলায় ৫২টি, বাঘা উপজেলায় ৪৬টি, চারঘাট উপজেলায় ৪০টি। এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সর্বত্র আনন্দ-উৎসবেই শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপনের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও প্রতিটি মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করছেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়ি, থানা অথবা তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।