রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী এমজিএম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।
এ বিক্ষোভ থেকে বাদশাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। তার কুশপুতুলও দাহ করেন তারা।
রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের পেছনে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এ সময় শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় এমপি ফজলে হোসেন বাদশার বেসামাল ও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার এবং তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াসহ নয় দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে বিএমএ, স্বাচিপ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের আয়োজনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন ফজলে হোসেন বাদশা। সেখানে তিনি বক্তব্যও দেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বাদশা বলেন, রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে শাহরিয়ারের মরদেহ ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন কোনোরকম পোস্টমর্টেম ছাড়াই। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামলা করেছি। আমরা চাই, কবর থেকে তুলে তার লাশের পোস্টমর্টেম করা হোক।
যারা রাজশাহী থেকে এসেছিল তাদের সবার ভিডিও ফুটেজ আছে, তাদের চিহ্নিত করা হোক। তারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। তারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল সেটাও প্রশাসনের দেখা দরকার। এখানকার চিকিৎসকরা শুধু রাজশাহী জেলার চিকিৎসা করেন না; পার্শ্ববর্তী দশটি জেলার চিকিৎসা নিরলসভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই মেডিকেলের সরকারি জিনিস ভেঙে ফেলেছে। যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।
তার বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মানববন্ধনে অংশ নেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান, বিএমএ সভাপতি ও রামেকের অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। পরে শনিবার থেকে তিনদিনের (৭২ ঘণ্টা) কর্মবিরতি ঘোষণা দেন রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন।
রোববার রাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা রাবির সাবেক শিক্ষার্থী হয়েও মিথ্যাচার করেছেন। দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে তিনি সরাসরি শিক্ষার্থীদের খুনি বানিয়ে দিলেন। উনি না জেনে আমাদের ষড়যন্ত্রকারী বলেছেন। আমরা চেয়েছিলাম ময়নাতদন্ত হোক। কিন্তু শাহরিয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার না করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, এমপি বাদশা না জেনেই কাগজকে মাথার মগজ বলছেন। এমন উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি। সেই সাথে উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না চাইবেন তাকে মতিহারের সবুজ চত্বরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় সহপাঠী মারা গেছেন এমন অভিযোগে হাসপাতাল ভাংচুর করে রাবি শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনায় কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। বাংলানিউজ