রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মুস্তাক শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বৃহৎ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা!
এ সময় পাল্টাপাল্টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে উভয় পক্ষ। আর ঘটনার তিনদিন পর উভয় পক্ষের অভিযোগ এজাহারভুক্ত করেছে পুলিশ।
চিকিৎসকের ওপর হমলা এবং হাসপাতালে ভাংচুরে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আজ রোববার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় রামেক হাসপাতাল প্রধান ফটকে আন্দোলন করছেন রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
আপরদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর অপসারণসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন রাবি শিক্ষার্থীরা।
তাদের ৯ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- মৃত শাহরিয়ারের মৃতদেহের পাশে অবস্থানকালে তার সহপাঠীদের ওপর নৃশংস হামলা হত্যাচেষ্টা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং আনসারদের অতিদ্রুত দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের প্রত্যেককেই তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে। রামেকের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর অসংলগ্ন আচরণ ও প্রত্যক্ষ মদদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে অভিযোগ করে রাবি শিক্ষার্থীদের দাবি এই পরিচালককে অপসারণ করতে হবে, রামেকের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে ফর্মালিটিজের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে, রামেকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ডাক্তারদের দোষ ওয়ার্ডবয়ের ওপর, ওয়ার্ডবয়দের দোষ ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে, এমপি বাদশার অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং অসংলগ্ন কথাবার্তার তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, ইন্টার্ন ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারীতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অভিযোগ জানাতে গেলে অভিবাবকদের ওপর অস্ত্রোপাচার সামগ্রী দিয়ে আক্রমণের বদভ্যাস পরিহার করতে হবে।
এদিকে, দুটি অভিযোগই শনিবার (২২ অক্টোবর) রাতে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে রাজপাড়া থানা পুলিশ।রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম মামলার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মামলার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর শনিবার (২২ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে পাল্টা মামলা দায়েরের জন্য লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পরে শনিবার রাতে উভয়পক্ষের অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে এ দুই মামলার অগ্রগতি হবে।
এর আগে গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় সহপাঠীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে হাসপাতাল ভাংচুর করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে হাসপাতালে ভাংচুরের অভিযোগে কর্মবিরতিতে যায় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। ফলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনডোর এবং আউটডোরে চিকিৎসাসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। চরম দুর্ভোগের পড়েছেন রোগীরা।