ঢাকামঙ্গলবার , ২৫ অক্টোবর ২০২২
  • অন্যান্য

রাজশাহীতে এইচএসসিতে সাড়ে ২১ হাজার পরীক্ষার্থী কম

অক্টোবর ২৫, ২০২২ ২:০৩ অপরাহ্ণ । ১৯০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এবছর রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে। কমেছে অংশগ্রহণ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। তবে কেনো কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা? শিক্ষাবোর্ড বলছে- পরীক্ষার্থী পাস করেছে বেশি। তাই এবছর এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী কম। তবে কলেজ প্রধানরা বলছেন- করোনার প্রভাব কাটেনি। এরমধ্যে রয়েছে বাল্য বিয়ে। অনেকেই কর্মে (কাজে) যুক্ত হয়েছে।

গেল বছরের তুলনায় এবছর এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী কমেছে ২১ হাজার ৭২০ জন। এরমধ্যে ছাত্র ১১ হাজার ৪৮১ জন ও ছাত্রী ১০ হাজার ২৩৯ জন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমেছে ৯টি। তবে পরীক্ষার কেন্দ্র বেড়েছে একটি। শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে- ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৪৫ জন। এরমধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫১৭ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৭১ হাজার ২২৮ জন। আর ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫ জন। এরমধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৩৬ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৬০ হাজার ৯৮৯ জন।

জানা গেছে- এবছর ২০২২ সালে নিয়মিত ছাত্র ৬৫ হাজার ৫৮৯ জন ও ছাত্রী ৫৯ হাজার ৩২৬ জন। সেই হিসেবে ছাত্রের তুলনায় ৬ হাজার ২২৭ ছাত্রী কম।

এছাড়া অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৫৪ জন। এরমধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৩৭৫ ও ছাত্রী ১ হাজার ৫৭৯ জন। এবছর মানোন্নয়ন পরীক্ষায় বসছে ১৪৩ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৬৬ ও ছাত্রী ৭৭ জন। এছাড়া প্রাইভেট ১৯ জন।

২০২১ সালে বোর্ডের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তালিকায় ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৪৫ জন পরীক্ষার্থী। ছাত্র ৭৯ হাজার ৭১৫ জন ও ছাত্রী ৭১ হাজার ২২৮ জন। ছাত্রীর চেয়ে ছাত্রের সংখ্যা বেশি ছিল। বিজ্ঞান বিভাগে ৩৭ হাজার ৯৯১ জন, মানবিক বিভাগে ৯৫ হাজার ২৬০ জন ও বাণিজ্য বিভাগে ১৭ হাজার ৩৬৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। এছাড় মোট ২০০টি কেন্দ্রে ৭৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে।

এবছর (২০২২) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে ৩৪ হাজার ৬১১ জন শিক্ষার্থীর। এরমধ্যে মানবিক বিভাগে ৮০ হাজার ৯৬৪ জন ও বাণিজ্য বিভাগে ১৩ হাজার ৩৮৭ জন। এছাড়া মোট ২০১টি কেন্দ্রে ৭৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসছে।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে- রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের আওতায় রয়েছে বিভাগের ৮ জেলা। এসব জেলার মধ্যে সবচেয়ে পরীক্ষার্থী কম জায়পুরহাটে। সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে। এবছর রাজশাহী জেলায় ৪০টি কেন্দ্রে ১৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ২৭৮ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ১৪ হাজার ১৯৮ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৮০ জন। নবাবগঞ্জে ১৫টি কেন্দ্রে ৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার ১৭৯ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৪৮২ ও ছাত্রী ৪ হাজার ৬৯৭ জন।

নাটোরে ২০টি কেন্দ্রে ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৯০৫ ও ছাত্রী ৫ হাজার ২৯৪ জন। নওগাঁয় ২৬টি কেন্দ্রে ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ২২৩ ও ছাত্রী ৫ হাজার ৭৬৯জন। পাবনায় ২৬টি কেন্দ্রে ৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৭ হাজার ৪০৩ জন শিক্ষার্থী।

এরমধ্যে ছাত্র ৮ হাজার ৩৭২ ও ছাত্রী ৯ হাজার ৩১জন। সিরাজগঞ্জে ৩০টি কেন্দ্রে ১০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২২ হাজার ২৮৫ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ১১ হাজার ৬৫৩ ও ছাত্রী ১০ হাজার ৬৩২জন।

বগুড়ায় ৩২টি কেন্দ্রে ১১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৪ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ১৩ হাজার ৩৪১ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৪৯৩জন। জয়পুরহাটে ১২টি কেন্দ্রে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৮৬২ ও ছাত্রী ২ হাজার ৯৯৩জন।

এবছর এক বিষয়ে পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৩৯৯ জন। আর দুই বিষয়ে পরীক্ষার্থী ১৭৫ জন। মোট ২ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে এক বিষয়ে পরীক্ষা দেবে ১ হাজার ৬১০ ছাত্র। আর দুই বিষয়ে পরীক্ষা দেবে ১২৭ ছাত্র মিলে মোট ১ হাজার ৭৩৭ জন। ছাত্রীর হিসেবে এক বিষয়ে পরীক্ষায় বসবে ৭৮৯ ও দুই বিষয়ে পরীক্ষা দেবে ৪৮জন মিলে মোট ৮৩৭ জন।

এবছর এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী কম কেনো এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, ‘রেজিস্ট্রেশন কম ছিল। গত বছর তার আগের বছর পরীক্ষার্থী পাস করেছে বেশি।’

পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান,‘গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ৫০জন পরীক্ষার্থী কম এইচএসসিতে। করোনাভাইরাসের প্রভাব; সেই সময় শিক্ষার্থীরা অনেক ঝরে পড়েছে। এছাড়া বাল্য বিয়ে। ইন্টার লেভেলের শিক্ষার্থীদের বিয়ে মানে বাল্য বিয়ে। অনেকের বাল্য বিয়ে হয়েছে। আমাদের অনেক ছাত্রী সন্তান নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে। আরেকটি কারণ জীবিকার তাগিদে কাজে যুক্ত হওয়া। অনেকেই সাংসারিক চাপে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছে। পড়া-শোনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বলে এই শিক্ষক জানান।’

পরীক্ষার্থী কমার বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি রাজশাহী জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা জানান, ‘করোনার সময়ে প্রচুর পরীক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়েছে। জন্মনিবন্ধন পরিবর্তন করে এই বিয়েগুলো হয়েছে। এরমধ্যে কিছু বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি।’