সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির খুদে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে বার্ষিক বা তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরে। আর ক্লাস টেস্ট থেকে ৪০ নম্বর যুক্ত হবে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মোট ১০০ নম্বরের পাঁচটি বিষয়ে বার্ষিক মূল্যায়ন হবে। এসব ক্লাসটেস্টে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জ্ঞানের প্রয়োগ, শোনা, বলা, পড়া ও লেখার দক্ষতার পরিমাপ হবে। দেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই দিনে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এভাবেই খুদে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ন করতে বলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে প্রতি বিষয়ে ১০০ নম্বরের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়টি দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা এ নির্দেশনা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি।
তিনি জানান, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। তার আগে শিক্ষার্থীদের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আগেই আমরা এনসিটিবির মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছি। শ্রেণি পরীক্ষার নম্বর ও তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষার নম্বর নিয়ে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ন করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরে পাঠানো নির্দেশনার কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে এসেছে। ওই নির্দেশনা পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে। প্রতিটি বিষয়ের কমপক্ষে পাঁচটি শ্রেণি পরীক্ষা নিতে হবে শিক্ষকদের। প্রতিটি শ্রেণি পরীক্ষার নম্বর হবে ২০। এ পাঁচটি শ্রেণি পরীক্ষার প্রাপ্ত মোট নম্বরের ৪০ শতাংশ ও তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষার ৬০ নম্বর-এ মোট ১০০ নম্বরে খুদে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ন হবে। এভাবে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির সমন্বিত প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে শিক্ষকদের। এরপর বিদ্যালয় অভিভাবকদের হাতে ফল তুলে দেবো।
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা আছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকবে না, ধারাবাহিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এর আগে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়নে নতুন এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ইতোমধ্যে বিভাগীয় উপপরিচালকদের পাঠিয়েছে।
যেভাবে শ্রেণি পরীক্ষা :
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রবর্তনের আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রচলিত পরীক্ষা তথা মূল্যায়ন পদ্ধতি চলমান থাকবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে শোনা, বলা, পড়া এবং লেখা বিষয়গত নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষার্থীর দক্ষতা পরিমাপ করতে হবে। পড়া ও লেখা শ্রেণি পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা পরিমাপ করতে হবে। শিক্ষক বিদ্যালয় খোলার তারিখ থেকে যতগুলো শ্রেণি পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে যে কয়টিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে এমন পরীক্ষার ৫টির নম্বর গণনা করবেন। প্রত্যেকটি শ্রেণি পরীক্ষায় ২০ নম্বরের ওপর পরীক্ষা গ্রহণ নিতে হবে।
গণিত বিষয়ে গাণিতিক ধারণা, প্রক্রিয়াগত ধারণা এবং সমস্যা সমাধানের ওপর লিখিত শ্রেণি পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের পরিমাপ শিক্ষকরা এতদিন করে এসেছেন। বিদ্যালয় খোলার তারিখ থেকে শিক্ষক যতগুলো শ্রেণি পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে যে কয়টিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে এমন পরীক্ষার পাঁচটির নম্বর গণনা করবেন। প্রত্যেকটি শ্রেণি পরীক্ষায় ২০ নম্বরের ওপর পরীক্ষা নিতে হবে।
বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে বিষয়গত জ্ঞান, বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং অনুশাসন প্রভৃতি পরিমাপের ওপর বিদ্যালয় খোলার তারিখ থেকে যতগুলো শ্রেণি পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে যে কয়টিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে এমন পরীক্ষার ৫টির নম্বর গণনা করবেন। প্রত্যেকটি শ্রেণি পরীক্ষায় ২০ নম্বরের ওপর পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
যেভাবে বার্ষিক মূল্যায়ন :
প্রত্যেকটি বিষয়ের পাঁচটি শ্রেণি পরীক্ষার মোট নম্বরের ৪০ শতাংশ এবং বাকি ৬০ নম্বরের ওপর ৩য় প্রান্তিক (বার্ষিক) পরীক্ষা নিতে হবে। এ শ্রেণি পরীক্ষাগুলো ও ৩য় প্রান্তিকের পরীক্ষার নম্বর যোগ করে ২০২২ এর শিক্ষার্থীর অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশের সব বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা একটি সুনির্দিষ্ট তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীর অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রণয়ন করার পর প্রত্যেক বিদ্যালয় তাদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ের ফল ঘোষণা করবেন এবং শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হাতে ফল তুলে দেবেন। শিক্ষার্থীর এ শিখন অগ্রগতির সমন্বিত রেকর্ড প্রত্যেক বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অনুমোদিত মূল্যায়ন নীতিমালায় প্রাথমিক স্তর থেকে এসএসসি বা মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে কোনো ধরনের পাবলিক পরীক্ষা অর্থাৎ পিইসিই, জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষা না গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১ ও পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম শ্রেণির কোন প্রান্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। তবে প্রবর্তিত ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে প্রতি প্রান্তিকের ফল দেয়া হবে। এছাড়াও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন বই প্রবর্তন সাপেক্ষে শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা এবং ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের সংমিশ্রণে মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকবে।