ঢাকারবিবার , ৬ নভেম্বর ২০২২

সরকারি কর্মচারীকে গ্রেফতারে পূর্বানুমতি বহালের আপিল গ্রহণ

নভেম্বর ৬, ২০২২ ১২:৩০ অপরাহ্ণ । ১০৩ জন

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতির রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের (লিভ টু আপিল) অনুমতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

একইসঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে বলেও আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আপাতত পূর্বানুমতি ছাড়া সরকারী কর্মচারীদের গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

রাষ্ট্রপক্ষের করা লিখ টু আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান ও মনজিল মোরসেদ।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আজকে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। আদালত আপিল করার অনুমিত দিয়েছেন। একইসঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন। ফলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতির বিধান আপাতত বহাল থাকলো।

তিনি বলেন, ‘এখন আপিল বিভাগের রায়ের ওপর নির্ভর করবে, এ আইন থাকবে কি না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপিল নিষ্পত্তি না হবে, ততক্ষণ ধরে নিতে হবে আইনটি বহাল।’

গত ১ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারা বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ।

একইসঙ্গে আবেদন শুনানি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছিল। এসময়ের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানির জন্য ওঠে।

এর আগে আইনের ধারাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা ৩১ আগস্ট চেম্বারজজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বারজজ আদালতের বিচারপতি আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

ওইদিন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের রায় ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এসময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে।

আর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি কর্মচারীদের অযথা হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা করা হয়। মামলার পর তাকে যদি গ্রেফতার করা হয়, পরে তিনি যদি মামলায় খালাস পান, তাহলে তার মধ্যে এক ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ভোগান্তি নিরসন ও সরকারি কাজের সুবিধার জন্য আইনটি করা হয়। এসব দিক সামনে রেখে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়।’

২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একই বছরের ১ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়।

আইনের ৪১(১) ধারার ভাষ্য, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।

আইনের ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থি উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে তিন আইনজীবী ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারা কেন বাতিল এবং সংবিধানের ২৬,২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন। ফলে ফৌজদারি অভিযোগে মামলা হলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে না বলে সেদিন জানিয়েছিলেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।- বাংলানিউজ

Paris