ঢাকামঙ্গলবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • অন্যান্য

বাইক্কা বিলে পর্যটক প্রবেশে ৯ দিনের নিষেধাজ্ঞা

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২ ৫:২১ অপরাহ্ণ । ২৪২ জন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে ৯ দিন পর্যটন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। নির্মিত স্থাপনা সংস্কারকাজের জন্য গতকাল সোমবার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিলে পর্যটকদের জন্য নির্মিত ব্রিজ, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, শৌচাগার সংস্কার করা হবে। এখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন প্রাণীর ছবি বাধাই করা রয়েছে। যেগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এসব নতুন করে লাগানো হচ্ছে। পর্যটকদের সাময়ীক অসুবিধা হচ্ছে, তবে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করে পর্যটকদের জন্য এই বিল পুনরায় খুলে দেওয়া হবে।’

baikka-bill-sreemangal-09

হাইল হাওরের বাইক্কা বিল পাখি ও মাছের অভয়াশ্রম। এই বিলে সারা বছরই পাখির আনাগোনা থাকে। শীতকালে এখানে অতিথি পাখি দেখা যায়। পাখি দেখতে পর্যটকদের জন্য এখানে আছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন।

পাখির রাজ্য বাইক্কা বিল

এদিকে, টানা তিন দিনের ছুটিতে মৌলভীবাজার জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এতে এই জেলার পর্যটনখাতে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা।

সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের বড়দিন উপলক্ষে রোববার ছুটি থাকায় সারা দেশের সব পর্যটন এলাকার মতো চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারেও পর্যটকের ঢল নেমেছিল। বেসরকারি উদ্যোগে এখানে গড়ে ওঠা পাঁচ তারকামানের রিসোর্টসহ শতাধিক হোটেল-রিসোর্টে ছিল পর্যটকের ভিড়। শ্রীমঙ্গলের সবুজ গালিচা চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হরিণছড়া গলফ মাঠ, পরিযায়ী পাখির বাইক্কা বিল, হাইল হাওর, বধ্যভূমি একাত্তরসহ সব দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকনিকে বাস ভাড়া নিয়ে ডে ট্যুরে আসা স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ করপোরেট পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জেলা।

বাইক্কা বিল, মৌলভীবাজার - ভ্রমণ গাইড

হোটেল মালিকেরা জানান, এবারের পুরো শীত মৌসুমেই পর্যটকের আগমন ঘটবে। কারণ এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। রাজধানী ঢাকা থেকে খুব কাছের এবং নিরিবিলি পরিবেশে অবকাশ যাপনের জন্য মৈলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল অতুলনীয়।

এছাড়াও জেলার চা বাগান বেষ্টিত এলাকা শ্রীমঙ্গল, বাইক্কা বিল হাওর, হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘী হাওর, মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাতসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব পর্যটনকে আকর্ষণীয় করা হলেও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ ৭০টি জেলায় শতাধিক হোটেল রিসোর্ট রয়েছে।

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় পর্যটকের জন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বর্ষীজোড়া ইকো পার্ক, মুরইছড়া ইকো পার্ক রয়েছে। এর মধ্যে শুধু লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩ দিনে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪ টাকা আয় হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক নারী-পুরুষ, শিশুসহ ছিলেন ২২ জন। দেশি পর্যটক ছয় হাজার ৪১৯ জন ছিলেন। ছোট-বড় যানবাহন ছিল ৩৪৭টি।

পাখির রাজ্য বাইক্কা বিল

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমদ জানান, এই তিন দিনে মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। শুক্র, শনি ও রোববার সবকটি হোটেল-রিসোর্ট শতভাগ বুকিং ছিল। পর্যটকের থাকা-খাওয়া, পরিবহন, হকারসহ কেনাকাটা সবমিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে। বিশেষ করে পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ সবাই ভালো ব্যবসা করেছে। ধারণা ছিল অন্তত ২০ কোটি টাকা আয় হবে। একই দৃশ্য পর্যটকরা বার বার দেখতে চান না। সেজন্য নতুনত্ব সৃষ্টি করা জরুরি।

তিনি বলেন, বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটলেও ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যতীত আর কোনো সংস্থার তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এছাড়া বিভিন্ন চা-বাগানসহ দর্শনীয় স্থানে সরু সড়ক থাকায় দুটি গাড়ি চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এতে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মাধবপুর লেকের রাস্তা এবং শ্রীমঙ্গল ডলুবাড়ি হয়ে নূরজাহান চা-বাগানের সড়কটি প্রশস্ত করার দাবি জানাই।

রাইজিংবিডি ও ঢাকা পোস্ট