ঢাকারবিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পঞ্চমবারের মতো নদী ভাঙনের কবলে বিদ্যালয়টি

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ । ১১৭ জন

নদী ভাঙন পিছু ছাড়ছে না বাঘার চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হতে মাত্র ১০ মিটার দূরে রয়েছে। এবার বিদ্যালয়টি পঞ্চমবারের মতো নদী ভাঙনের কবলে পড়তে যাচ্ছে। যদিও স্কুলের মাঠের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুইটি ক্লাস রুম ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অসময়ের এ নদী ভাঙনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, এবার ভাঙলে কোথায় যাব? পদ্মার চরে স্কুল করার মতো জায়গার সঙ্কট রয়েছে। যতবার ভাঙনের কবলে পড়েছি স্কুলের জায়গা পরিবর্তন করা হয়েছে, ততবারই শিক্ষার্থী কমেছে। ফলে দুর্গম এই চরে শিক্ষার্থী জোটানো কষ্ট করে হয়ে পড়ে শিক্ষকদের পক্ষে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চকরাজাপুর হাই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৭৮ সালে। তার ১৫ বছর পরে প্রথম ভাঙনের কবলে পরে বিদ্যালয়টি। দ্বিতীয় বার ১৯৯৮ সালে, তৃতীয় বার ২০১২ সালে এবং চতুর্থ বার ২০১৮ সালে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রতিবার ভাঙনের কবলে পড়লে দুই কিলোমিটার দূরে আবার বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়। তারপরেও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। বিদ্যালয়টি স্থাপনের পরে শুধু দীর্ঘ সময় ছিল একই জায়গায়। পরে পরবর্তীতে অল্প সময়ের মধ্যে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছরই কমেছে শিক্ষার্থী।

চকরাজাপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, এটি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ৫৩৭ জন। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৩০ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ১৩৮ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৮৫ জন, নবম শ্রেণিতে ৯০ ও দশম শ্রেণিতে ৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পাঠদানে ১৩ শিক্ষকসহ কর্মচারী মিলে ১৯ জন কর্মরত রয়েছেন। স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আমরা এতো শিক্ষার্থী নিয়ে কোথায় যাব। আগে পদ্মার চর অনেক বড় ছিল, অনেক জায়গা ছিল, বিদ্যালয় নির্মাণ করতে চাইলে সহযোগিতার হাত বাড়াতেন অনেকেই। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। যদিও আগে লিজ বা জমি কিনে স্কুল ঘর করেছিলাম। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে এখন তো পদ্মার চরে জমিই নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার মতো।

তিনি আরও বলেন, এখন চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ৪২ বিঘা জমি রয়েছে। সেই জমি খাতা-কলমে, সরেজমিনে নেই। সরেজমিনে দেখতে গেলে নদী গর্ভে যেতে হবে। স্কুলের এই সব জমিগুলো বিভিন্ন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পরে কেনা বা বিভিন্ন মানুষের দেওয়া সর্বমোট ২২ বিঘা জমি ছিল স্কুলের। নদী ভাঙনে জমিসহ স্কুল বিলীন হয়ে গেছে। আগের স্কুলের জায়গা থেকে আরও দুই কিলোমিটার পূর্বে এসে দ্বিতীয়বারের মতো ভবন নির্মাণ করে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই দফায় স্কুলের জমি ছিল ১১ বিঘা। নদী ভাঙনে সেই জমিও বিলীন হয়েছে। তৃতীয় দফায় স্কুল করার সময় তেমন জমি ছিল না। লিজসহ পরবর্তী সময়ে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ বিঘায়। সেটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশেষ বর্তমান স্কুলের জায়গায় কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। তবে যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। তাতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে জমিসহ বিদ্যালয়টি।

প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, ভাঙতে ভাঙতে স্কুলের মাঠ নদীগর্ভে চলে গেছে। চার কক্ষের টিনের ঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্কুলের ৩ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন ও টিনের আরও ৪ কক্ষ ঘর পদ্মার ভাঙন থেকে ১০ মিটার দূরে রয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ক্লাস রুম সরিয়ে নিয়ে মেয়েদের কমনরুমে বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আমাদের স্কুলের ক্লাস রুমগুলো বড় বড়। তাই একটা রুমকে দুইটি ক্লাস রুম বানানো হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসগুলো নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএফএম হাসান জানান, নদী ভাঙনের কারণে ক্লাস রুম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি আমি উপজেলার সভাতে কয়েক বার তুলেছি। বিষয়টি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জানেন। সেখানে অনেক বড় বড় বালুর বস্তা ফেলেও কাজ হচ্ছে না।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিএম মনোয়ার বাবলু দেওয়ান বলেন, অসময়ে ভাঙনের কারণে চকরাজাপুর, কালিদাসখালী, লক্ষ্মীনগর মৌজার চিহ্ন হারিয়ে গেছে। বর্তমানে এগুলোর স্থান বলতে কিছু নেই। সম্পূর্ণটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে স্কুল ভবনটি স্থানান্তর না করলে অসময়ের ভাঙনে যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে স্কুলটি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, অসময়ে নদী ভাঙন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি বুঝে স্কুলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।- ঢাকা পোস্ট

Paris