নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের দক্ষিণের প্রাচীরে বসন্ত বরণ উৎসব উপলক্ষে চলেছে চিত্রাঙ্কন। প্রাচীরজুরে স্থান পাচ্ছে লোকজ নকশা। পুরো প্রাচীরে ৬১টি বিভিন্ন চিত্র আঁকতে কাজ করছেন অনুষদের ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। তারা রঙ-তুলির মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের চিত্র ফুটিয়ে তুলছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে প্রাচীরের দেয়ালে আঁকা এসব চিত্রগুলো। এতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে লোকজ নকশা, ফোক অথবা বিশেষ কোন আর্টটিস্টের কপি ওয়ার্ক। দেয়ালটির গায়ে ছোঁয়া লেগেছে হরেক রকমের রঙের তুলি। লাল, নীল, সবুজ, হলুদসহ নানা রঙের তুলিতে তৈরি হচ্ছে দেয়ালচিত্র। ফলে রঙিন হচ্ছে ক্যানভাস। একেকটা ক্যানভাসে একেকটা বিষয় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব চিত্রকর্ম লম্বা দেয়ালটিতে প্রতিটি ভাগে আলাদা সব ক্যানভাস। প্রতিটি ক্যানভাস তৈরির জন্য চারুশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে দেয়ালকে মসৃণ করে নিচ্ছেন। কেউ চক বা পেনসিল দিয়ে নির্ধারিত চিত্রকর্মের খসড়া তৈরি করছেন। কেউ আবার প্লাস্টিকের পাত্রে রঙ তৈরি করছেন। সেই রঙ দিয়ে সাদা দেয়াল রাঙিয়ে তুলছেন চারুশিল্পীরা।
২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী অভি সরকার বলেন, ২০২০ সালেও বসন্তবরণকে কেন্দ্র করে এই দেওয়ালে বিভিন্ন চিত্র আঁকা হয়েছিল। এছাড়া পিঠা উৎসব পালন করা হয়। প্রতিবছর উৎসব পালিত হল। আমাদের আগেই পরিকল্পনা ছিল চারুকলার সামনের দেয়ালজুড়ে দেয়ালচিত্র করার। আর সেটার জন্য বসন্তের আগের সময়কে ঠিক করা হয়।
রাবি অনুষদের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, উপলক্ষটা বসন্ত বরণ উৎসব। এই উৎসবের ভেতরে আমাদের কিছু কার্যক্রম আছে। তার ভেতরে দেওয়ার চিত্র অন্যতম। এছাড়া রয়েছে ড্যামি, মুখোশ ছাড়াও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মোট দেওয়ালে চিত্র হবে ৬১টি। তার কোন টার সাথে কোনটির মিল নেই। এই চিত্রগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি, বাংলার যে লোকজ বিষয়, ফোক ফোকাস করার। এখানে চিত্র আঁকার বিষয়টি স্বাধীন, শিল্পীরা নিজের ইচ্ছে মতো আকবে। তারা ফোকের কাজ করবে, অথবা বিশেষ কোন আটিস্টের কপি ওয়ার্ক করবে। এছাড়া শোভাযাত্রায় মুখোশ থাকবে। যেটা নিয়ে আমরা শোভাযাত্রা করবো। বসন্ত বরণর ঐহিত্য, বসন্তকে আমরা উৎসব আকারে বরণ করে নিতে চাই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্ষ বরণ উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা চিত্রাঙ্কনগুলো করছে। বসন্ত বরণের দিন এটির উদ্বোধন করা হবে। কবিরা বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরেন। আমরা ছবির মাধ্যমে ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরছি।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে চারুকলার এই দেওয়ালে ৬১টি চিত্র আঁকা হয়েছিল। এতে ফুটে উঠে বয়সের ভারে ন্যুব্জ এক মা, দেহ কঙ্কালসার, পরনেও জীর্ণশীর্ণ কাপড়, মাথার চুলগুলোও উসকো খুসকো, মাটির পিড়িতে বসে তিনি তার সন্তানের মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন, সেই সন্তানের গায়েও জামা নেই।