মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তচ্যূত ১০ লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গার চাপ সামলে নিতে ঢাকাকে সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই সংকটের মূল কারণ নিয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাউন্সিলর ডেরেক শোলে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় আমরা প্রতিদিন শুধু তাদেরই সহায়তা করছি না, বরং এই সংকটের মূল কারণটি নিয়েও আমরা কাজ করছি- যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রথিত।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সিনিয়র পলিসি এডভাইজার শোলে বলেন, মানবিক কারণে এই বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যূত মানুষকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপক প্রশংসা করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তার অফিসে বৈঠকের পর শোলের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ গণমাধ্যমের মুখোমুখী হন।
মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশনায় একটি বিশেষ কূটনৈতিক অ্যাসাইনমেন্ট করতে তিনি একজন আন্ডারসেক্রেটারির পদে রয়েছেন।
এরআগে সকালে শোলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিনি এই সাক্ষাৎকে ‘চমৎকার’ বৈঠক বলে অভিহিত করেছেন।
ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে, আর সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর তারই প্রতিফলন।
এই সূত্র ধরেই তিনি বলেন, ‘আমি হচ্ছি ওয়াশিংটন থেকে ঢাকায় আগত সর্বশেষ জ্যেষ্ঠ সফরকারী, অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও রাজনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আমরা যে গুরুত্ব দিয়ে থাকি এটি তার প্রতীক।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ৫১ বছরের অত্যন্ত দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা এখন এই সম্পর্ককে আগামী ৫১ বছর এবং তারও পরবর্তী সময়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় আছি।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অনেক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অনেক অভিন্ন সুযোগও রয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি বড় আকারে স্থান পায়। এই মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সবচেয়ে বেশি।
মোমেন বলেন, ‘তারাও আমাদের সঙ্গে একমত যে রোহিঙ্গাদের বাসস্থানের অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। তাদের বাসস্থানের অবস্থার উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের সঙ্গে থাকবে।’
মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। একক দেশ হিসেবে দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। বছরে তারা ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক ক্রয় করে। ঢাকা তারচেয়েও বেশি চায়। যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে নবনির্মিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন করে বিনিয়োগ করে- তবে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫০ বছরে আমাদের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। তবে, আমরা এই সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নই এই সফরের লক্ষ্য। পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও এতে অন্তর্ভূক্ত।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাসস