ঢাকাসোমবার , ৬ মার্চ ২০২৩

দেশ সেরা সাঁথিয়ার সুবর্ণা বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায়

মার্চ ৬, ২০২৩ ১:১৫ অপরাহ্ণ । ২০৪ জন

পাবনা প্রতিনিধি :


আন্তঃস্কুল,মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণ ও রৌপ্যজয়ী পাবনার সাঁথিয়ার সুবর্ণা এবছর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(বিকেএসপিতে) চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় বালিকা বিভাগ থেকে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

সে উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এবং সাঁথিয়া পৌরসভাধীন ২ নং ওয়ার্ডের ফেঁচুয়ান গ্রামের রাসেল শেখের কন্যা। তার পিতা একজন অটোভ্যান চালক। সুবর্নার বাবার শুধু বাড়ির চার শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নেই।

তারা তিন বোনসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের। বড় বোন ওই বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। তার বাবার পক্ষে পরিবারের খরচ বহন করে তার ভর্তির টাকা,খেলাধুলার পোষাক ও লেখাপড়ার খরচ দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

পারিবারিক ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,সুবর্না ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০২১ সালে পাবনা জেলা ক্রীড়া অফিস আয়োজিত বার্ষিক এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় সাঁথিয়া উপজেলার হাটবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১০০ ও ২০০ মিটার এবং রশি দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। এরপর ২০২২ সালে জেলা,উপজেলা,বিভাগ বা উপঅঞ্চলে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে এবং দীর্ঘ লাফে প্রথম স্থান এবং অঞ্চল পর্যায়ে( রাজশাহী ও রংপুর দুই বিভাগ মিলে) ১০০ মিটার ও রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে।

পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে দিনাজপুর স্টেডিয়ামে ২০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক বা পুরস্কার পায়। একই মাঠে রিলে দৌড়ে জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে রৌপ্য পদক পায়। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কঠোর অনুশীলন করে সুবর্না। গেল বছর ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগে বিকেএসপিতে প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় বালিকা বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।

এরপর ২০২৩ সালে উপজেলা, জেলা, উপঅঞ্চল(৮ জেলা মিলে) ও অঞ্চল (দুই বিভাগ মিলে) পর্যায়ে ১০০,২০০ মিটার দৌড় ও দীর্ঘ লাফে এবং রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হয়। জাতীয় পর্যায়ে যশোরে রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণ পদক পায় এবং দীর্ঘ লাফে দ্বিতীয় হয়ে রৌপ্য পদক এবং ২০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক পায়।

এ বছর গত ৩১ জানুয়ারি বিকেএসপি (জিরানি,সাভার)ঢাকাতে এ্যাথলেটিক্স বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় বালিকা বিভাগ থেকে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে। এছাড়া এ বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ কামাল এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় উপজেলা,জেলা ও রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে এবং দীর্ঘ লাফে প্রথম স্থান অর্জন করে।

সুবর্ণার ভর্তি হতে সব খরচ মিলে ২৩ হাজার টাকা লাগবে। কিন্ত তার দরিদ্র পিতার পক্ষে এত টাকা এ মুহূর্তে কিছুতেই যোগার করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাহলে কি অর্থের অভাবে সুবর্নার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে?
সুবর্ণার বাবা রাসেল শেখ বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ,ভ্যান চালায়া সংসার চালাই। আমি চাই আমার মিয়াডা খেলাধুলায় শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ^ জয় করুক,সেটা যেন আমাগরে গাঁর মানুষ দেখপ্যার পারে।

আমার মিয়ার ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমার মেয়ের স্বপ্ন পুরন করার জন্যি সগলের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।’ তাকে সহযোগিতা করতে সুবর্নার প্রশিক্ষক,এনামুল হক, বিকাশ মোবাইল নাম্বার-০১৯৭৬১০৩১৪৭।

সুবর্ণার মা সালমা খাতুন একজন গৃহিনী, তিনি বলেন,আমরা গরীব মানুষ,আমার স্বামী ভ্যান চালায়্যা যে টাকা পায় সেটা দিয়্যে চাল ডাল কিনে খাই। যেদিন কামাই অয়না সেদিন পরের বাড়ি থেইক্যে চাল ধার কইরে‌্য খাই। অভাব অনটনের সংসার আমাগরে। মিয়াডার ভর্তি লিয়্যে খুব চিন্ত্যেয় আছি। মিয়াডার ভর্তির জন্যি বড়লোক গরে কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন করছি। আমার মিয়াডা যিনি খেলাধুলা কইরে‌্য বড় কিছু অব্যের পারে। ’
সুবর্ণা জানায়,আমার স্বপ্ন আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানবি হতে চাই এবং অলিম্পিক গ্যামসে আমি স্বর্ণ পদক জয় করে বাংলাদেশকে বিশে^র দরবারে উন্নত শিখরে তুলে ধরতে চাই।
সুবর্ণার প্রশিক্ষক এবং ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক এনামুল হক বলেন,‘সুবর্ণা এমনই একটি মেয়ে যার প্রবল ইচ্ছা শক্তি প্রখর। সে যেটা চিন্তা করে বাংলাদেশের দ্রুততম মানবি হতে পারবে। কারন তার সাহস সামনে আগানোর। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সে কঠোর পরিশ্রম করতে দ্বিধাবোধ করেনা।আমি সুবর্নাসহ ১০/১২জন ছেলে ও মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি তার মধ্যে সুবর্না অদম্য। সুবর্নার প্রতি আমার দৃঢ় বিশ^াস সে অলিম্পিক গ্যামসে স্বর্ণ পদক জয় করবে কারন এখন সে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য সুযোগ পেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের শিরি পেয়েছে।’

সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন,সুবর্না আমার বিদ্যালয়ের একজন গরীব ও মেধাবী ছাত্রী। সে যদি অনুশীলনের ধারা অব্যাহত রাখে এবং বিকেএসপি ভর্তি হতে পারে তাহলে সে অবশ্যই আগামীতে বড় মাপের এবং দেশ সেরা এ্যাথলেটিক্স হতে পারবে। তার ভর্তির ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা ও বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে ওর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার বলেন, আমাদের এলাকায় সুবর্ণার মত একজন এ্যাথলিট গড়ে ওঠায় আমরা গর্বীত। আমি ব্যাক্তিগতভাবে তাকে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতে তার স্বপ পূরনে আরো সহেযাগিতা করা হবে।

Paris
Paris