ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহারাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে সেদিন বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ প্রায় ১৮ মিনিটের এ ভাষণ নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম জনযুদ্ধে রূপ নেয়।
তাই প্রতিবছর এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করে বাঙালি জাতি। সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও দিবসটি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়।
এই উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনভর কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ।আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোও দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়া আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আজ সকাল দশ’টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে ‘৭ মার্চ : স্বাধীনতার জীয়নকাঠি’ শীর্ষক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে সভায় বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, এনডিসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো: আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো: আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: কামাল হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। অনুুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন রাজশাহী নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. মো: ওয়ালিউর রহমান।
সভায় বক্তাগণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা করেন।
বক্তাগণ বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ১৮ মিনিটের ভাষণে একটি জাতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে দিশেহারা বাঙালি জাতি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনে বাংলার স্বাধীনতা।
এ সময় তাঁরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনায় দেশের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে মন্তব্য করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে পরিণত হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
সভা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী শেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এর আগে সকাল নয়’টায় নগরীর বঙ্গবন্ধু চত্বরের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।