ঢাকাসোমবার , ১৩ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

রাসিক মেয়রের উদ্যোগে ‘অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা

মার্চ ১৩, ২০২৩ ৮:৩১ অপরাহ্ণ । ১০৫ জন

রাজশাহী মহানগরীর শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নাগরিক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী ও নারীনেত্রীদের নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্যোগে ‘অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে নগর ভবনের সিটি হলরুমে আয়োজিত সভায় বক্তারা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো এমন সভার আয়োজন করায় রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ধনবাদ জানান বক্তারা।

সভায় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির নেতৃত্ব ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বিপন্ন করার জন্য আজ নানাবিধ অপতৎপরতা ঘটিয়ে চলেছে। এমতাবস্থায় স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।

সভায় বক্তারা আরো বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত সংর্ঘষ ও রেল লাইন সহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সেক্ষেত্রে সবাইকে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে সভায় সভামঞ্চে উপবিষ্ট থেকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক, রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বেগম আখতার জাহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুদ্দিন খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর শামসুল আলম (বীর প্রতীক), কুবিকুঞ্জের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী এ্যাডভোকেট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন। সভা সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত। সভায় অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নাগরিক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও নারীনেত্রীরা।

সভায় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটা জীবন শ্রম, সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, কিন্ত তিনি তাঁর নীতি-আদর্শে আপোস করেননি। বঙ্গবন্ধুর সেই অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টায় লিপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থেকে সেই অপশক্তির অতৎপরতাকে রুখে দিতে হবে।

খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, বিএনপি বলছে, ‘তারা আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে না, নির্বাচন হতে দেবে না’। তাদের এই কথার মধ্যে যে নাশকতার মতলব ছিল, সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আর কখনো ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। রাজশাহীতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোকে আরো সুসংগঠিত করা হবে। যাতে যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পড়তে পারি। আগামীতেও এই ধরনের সভা অব্যাহতভাবে আয়োজন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। এই সম্প্রীতি বজায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে রাজশাহী দেশে ও দেশের বাইরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, শান্তি ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এখন রাজশাহীর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে। রাজশাহীর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটা জায়গায় সফল হতে যাচ্ছি। সেটি হলো নানা আলোচনার পরে বাংলাদেশ-ভারতে নদী পথে যে বাণিজ্য সেটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে মায়া থেকে সুলতানবাদ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত নদীপথে পাথর, ফ্লাইএশ ইত্যাদি মালামালি নিয়ে যাওয়া-আসা হবে।

রাসিক মেয়র লিটন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীকেও আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ কাজে মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সকলে পাশে থাকবেন-এটিই প্রত্যাশা করি।

সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির শিকড় অনেক গভীরে। তাদের মধ্যে জামাত-শিবির ঢুকে পড়ে। তাদেরকে হাল্কাভাবে নিলে হবে না। তাদের ব্যাপারে সকলকে সর্তক থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে দূর সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এই অপশক্তি আমাদের কিছুই করতে পারবে না। তারা মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দেয়। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাভূত করতে পারবো। রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো এমন সভার আয়োজন করায় মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ধর্মীয় বিভাজন ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে লাভবান হয় তৃতীয় পক্ষ। একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদেরকে প্রতিহতের কাজ এখনই শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে ভাষা আমাদের সহায়ক হতে পারে। কারণ আমাদের ধর্ম আলাদা হলেও আমরা সবাই বাঙালি ও আমাদের ভাষা বাংলা। আমরা যদি বাংলা ভাষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে পারি তাহলে ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা দূর করা সম্ভব হবে। সময়োপযোগী এই সভায় আয়োজনের জন্য মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই।

উপাচার্য আরো বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনাতে নিয়ন্ত্রণ করতে মেয়র মহোদয় সব সময় পাশে ছিলেন, এজন্য মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে তারা কখনো সফল হতে পারবে না।

কুবিকুঞ্জের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, প্রকৃত ধার্মিক মানুষ কখনো সাম্প্রদায়িক হয় না। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা নিজেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। আমাদের বিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না। আমাদের সকলকে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে চাঙা করতে হবে। পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক চর্চাকে উৎসাহিত করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের আয়োজন বইমেলা সহ সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা যেতে পারে।

সভায় অংশ নিতে আরো বক্তব্য দেন রাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর আবুল কাশেম, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ^াস, রাবি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান, রাবির অধ্যাপক আ.ন.ম ওয়াহেদ, স্বাচিপ রাজশাহী জেলার সভাপতি ডা. চিন্ময় কান্তি দাস, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তানবিরুল আলম, সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. হামিদুল হক, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক মোঃ লিয়াকত আলী,  রাজশাহী বেতার শিল্পী সমিতির সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম বকুল, বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ কামরুজ্জামান, নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজের উপাধাক্ষ্য প্রফেসর ওলিউল আলম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জিল্লর রহমান, সাংস্কৃতিক কর্মী ঋষভ, ব্যবসায়ী এহসানুল হুদা দুলু, কবি কামরুল বাহার আরিফ, নাট্যকার সেলিম জাহাঙ্গীর, আরডিএর নগরপরিকল্পনাবিদ মোঃ কামরুজ্জামান প্রমুখ।

Paris