রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির সেই ঘড়িয়াল আবারো ডিম দিয়েছে।
আজ রোববার (১৩০৪ ঘণ্টা) সকালে রাজশাহী সিটি মিউজিয়াম ও আর্কাইভের কিউরেটর এবং চিড়িয়াখানার সাপ্তাহিক তদারক মো. আনারুল হক আনা ঘড়িয়ালের সেই ডিমের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমলে ঘোড়দৌড় মাঠেই রাজশাহীর কেন্দ্রীয় পার্ক স্থাপনের পর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান ১৯৭৩ সালের ২৮ জুলাই এটি উদ্বোধন করেছিলেন। নামের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তা আজ শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল ও চিড়িয়াখানা।
তিনি জানান, সম্প্রতি এই ঘড়িয়ালের প্রজনন বা বংশবৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নেয় রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ঘড়িয়ালের জলাশয় খাঁচার দক্ষিণাংশে বালুচর তৈরি করা হয়েছে। যাতে ঘড়িয়াল সেখানে উঠে রোদ পোহানোর সুযোগ পায় ও ডিম পাড়তে পারে।
ছয় বছর আগে চিড়িয়াখানায় দুইটি ঘড়িয়ালের জুটি বাঁধানো হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল নারী ঘড়িয়ালটি ডিম দেবে। এর মধ্য দিয়ে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির বংশবিস্তার ঘটবে। এজন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশও তৈরি করা হয়।
গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকাল ৯টার পর তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কিউরেটর (দৈ.ম.) মো. আনারুল হক (আনারুল হক আনা) চিড়িয়াখানার কর্মচারী শামসুল ও আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে খাবার দিতে গিয়ে দেখতে পান ভাঙাচোরাসহ আস্ত কয়েকটি ডিম। বালুচরায় নয়। মাঝখানের মেটে ঢিবির জলের ধারেই ডিমগুলো পেড়েছে ঘড়িয়াল।
প্রথমে শামসুল ও আলমগীর ডিমগুলো দেখে ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা আনাকে ডাক দেন। আনা নেমে যেতেই নারী ঘড়িয়ালটি তেড়ে আসে তাদের দিকে। পরে চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার আবুল কালাম আজাদ, কর্মচারী বাবরসহ অন্যদের সহযোগিতায় আটটি ডিম উদ্ধার করে অফিসে নিরাপদে রাখা হয়। এবারই রাজশাহীতে সর্বপ্রথম ঘড়িয়ালের ডিম সংগ্রহ করা হলো। ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফোটানো হবে।
প্রায় ৩৫ বছর আগে থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে দুটি ঘড়িয়ালের বসবাস। তবে, ওই সময় দুটিই নারী হওয়ায় প্রজনন নিয়ে কোনো আশা ছিল না। এরপর বংশবিস্তারের বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৭ সালের আগস্টে এখানকার একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল আনা হয় রাজশাহীতে। এর পরের চিত্রটা আশা জাগানিয়া। কয়েকদিন না যেতেই পুরুষ ও স্ত্রী ঘড়িয়ালের মধ্যে ভাব-ভালোবাসা তৈরি হয়। তাদের ক্রসিং (মেলামেশা) দেখে আশায় বুক বাঁধে কেন্দ্রীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী শহীদ কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ‘জুটি বাঁধার পর এই ছয় বছরের মধ্যে অন্তত দুবার ডিম দিয়েছে নারী ঘড়িয়াল। তবে বাচ্চা ফোটেনি। কিন্তু এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ঘড়িয়ালরা ডিম পাড়ার পর গর্ত করে ডিম ঢেকে রাখে। রাজশাহী চিড়িয়াখানায় যে পুকুরে ঘড়িয়াল থাকে সেখানে ডিম পাড়ার পর গর্ত করে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে পুকুরটির মাঝখানে পানির লেভেল থেকে একটু উপর পর্যন্ত বালু ফেলা হয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঘড়িয়ালদের প্রজনন মৌসুম। ’
তিনি বলেন, তিন-চারটা করে দুবার ঘড়িয়ালের ডিম পাওয়া গেছে। এরা বালুতে উঠে বিশ্রাম নেয়। তাই ন্যাচারালি ডিম পেড়ে বালু দিয়ে ৮-১০ ইঞ্চি ঢেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু এটা পানিতেই ডিমটা পেড়ে দিচ্ছিল। বালুতে পাড়ছিল না। এজন্য এক-চতুর্থাংশ বালুর বেড করে দেওয়া হয়েছিল। এখানে ডিম পাড়াতে পারলে বালু দিয়ে ঢেকে হোক বা ইনকিউবেটরে হোক, আমরা বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম।
এবার ঘড়িয়াল বালুতে ডিম পেড়েছে। তাই নতুন প্রাণের আশা করা যাচ্ছে। এবার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে পারবে। কর্তৃপক্ষ ঘড়িয়ালের নতুন অতিথি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
এর আগে, গেল বছরও নারী ঘড়িয়ালটি ডিম দিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করা যায়নি। তাই নতুন করে ডিম পাড়ায় আবারও সেই সম্ভাবনা দেখতে পারছে কর্তৃপক্ষ।