নিজস্ব প্রতিবেদক:
নয় মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে তিন মাস ধরে আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের শ্রমিকরা। আন্দোলনের ফলে বেতন না হলেও ছয় শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ১০ শ্রমিককে। বর্তমানে কাজ, বেতন ও মামলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে শ্রমিকদের।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বারেগপ্রই) প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
এসময় শ্রমিক আব্দুল মালেক বলেন, ‘এখানে তিন বছর কাজের বয়স হলে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে ধরা হয়। আমার চাকরির বয়স ২৫ বছর। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে আমি অদক্ষ ও অনিয়মিত। আমাদের বছরের ৩৬৫ দিনই কাজ করা লাগে। তারপরেও আমাদের অনিয়মিত বলছে। এখন বেতন নেই চাকরি নেই, আছে শুধু মামলা। এদিকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের বেতন ছিল ৬০০ টাকা। এখন থেকে সবাইকে দেবে সাড়ে ৫০০ টাকা। দক্ষ ও অদক্ষ সব সাড়ে ৫০০ টাকা।’
বুধবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ১০ শ্রমকিকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। অব্যাহতির তালিকার ১০ জনের মধ্যে ছয়জনই গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কর্মকর্তার করা মামলার আসামি। মামলা ও অব্যাহতি দেওয়া শ্রমিকরা হলেন, শামসুল হক (আসামি), হামিদুর রহমান (পলাশ) (আসামি), আব্দুল মালেক (আসামি), হজরত আলী (আসামি), শামীম সরকার, মানিকুল ইসলাম, আয়নাল হক কালু (আসামি), নূর হোসেন, শামীম হোসেন (আসামি), আব্দুল মামুন রানা।
এর আগে বারেগপ্রই পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ এমদাদুল বারীর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ‘রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের দৈনিক ভিত্তিক অনিয়মিত শ্রমিকদের কাজ হতে অব্যহতি প্রদান করা হলো। কর্মদিবসে নিয়মিত দাপ্তরিক কার্যক্রম করার সময় গত ২৭/৩/২০২৩ তারিখ পূর্বাহ্নে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিম্নে উল্লিখিত অনিয়মিত দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকগণ অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কক্ষে হামলা করে কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনহানির হুমকি দিয়েছেন। উক্ত হামলাকারী ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানকারী চিহ্নিত নিম্নলিখিত ১০ জন অনিয়মিত দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিককে কাজে না নেওয়ার জন্য বারেগপ্রই-এর সকল শাখা প্রধানকে বলা হলো। উক্ত শ্রমিকগণের অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকারও এতদ্দ্বারা রহিত করা হলো।’
গত সোমবার (২৭ মার্চ) বেলা ১২টায় বাংলাদেশের রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এমন ঘটনায় ওই দিন বিকেলে ছয় শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের শিকার হওয়া ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা (চ.দা.) সাখাওয়াত হোসেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন।
গবেষণা কর্মকর্তা (চ.দা.) সাখাওয়াত হোসেনের করা মমালার আসামি হজরত আলী বলেন, আমরা বেতনের বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। স্যার আমাদের রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। একই সঙ্গে ৬০০ টাকা বেতনের জায়গায় আমাদের সাড়ে ৫০০ টাকা করে বেতন ধরা হয়েছে বলেন। এ নিয়েই সমস্যা সৃষ্টি হয়। এখন তিনি মামলা করেছেন। আমরা সবাই জামিন নিয়েছি। বেতন তো আমাদের পাওনা। নয় মাসের বেতন বাকি। পাওনাদারদের আর কত মিথ্যা কথা বলব।
এ বিষয়ে গবেষণা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তিন মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার জন্য তাদের (শ্রমিক) বিল করছিলাম। তারা এসে আমাকে বলে তিন মাসের বিল কেন? নয় মাসের বকেয়া বেতন চাই। একইসঙ্গে ৬০০ টাকার জায়গায় সাড়ে ৫০০ টাকা কেন জানতে চায়। এ সময় আমি তাদের বলেছিলাম আপনারা বিষয়টি নিয়ে ডিজি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডিজি স্যার মানবিক কারণে অন্য এক জায়গা থেকে টাকা এনে আপনাদের বেতনের ব্যবস্থা করেছেন। আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছে আমি সেটাই পালন করছি। এভাবে এক কথা, দু’কথা হতে হতে তারা আমার কলার চেপে ধরে।’
এ বিষয়ে বারেগপ্রই পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ এমদাদুল বারী বলেন, দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকগণ অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কক্ষে হামলা করে এক কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। তারা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাখাওয়াত নিজেই বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ওই শ্রমিকদের বিষয়ে তাদের শাখা প্রধানদের বলেছি। তারা ১০ জন শ্রমিকে অব্যাহতি দিয়েছে।
রাজশাহী রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সহ-সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মামলা ও শ্রমিকদের অব্যাহতির বিষয়টি আমার জানা নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কিছু তথ্য চেয়েছিল। আমরা সেগুলো পাঠিয়েছি। ঈদের আগেই তাদের বেতন হবে।