ঢাকারবিবার , ৯ এপ্রিল ২০২৩
  • অন্যান্য

রাজশাহীতে মৃদু তাপপ্রবাহে ঝরছে আমের গুটি

এপ্রিল ৯, ২০২৩ ৭:৪৬ অপরাহ্ণ । ১১৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আমের মুকুল থেকে গুটি বাঁধাতে গাছে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন। এসময়ে বৃষ্টি আমের জন্য আশিবাদ বলা হয়ে থাকে। এবছর ঠিক তাই ঘটেছে। মুকুল থেকে গুটি বাঁধাকালে রাজশাহীতে কমবেশি পাঁচ দিন বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অধিক ফলনের আশা জোগায়।

তবে সেই আশা গত পাঁচ দিনের অব্যহত মৃদু তাপপ্রবাহ সঙ্কায় পরিণত করেছে। মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে বাগানগুলোতে ঝরতে শুরু করেছে আমের গুটি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তাপপ্রবাহের আগে রাজশাহীতে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই গুটি ঝরা আশঙ্কা একটু কম। যেটুকু ঝরছে সেটা স্বাভাবিক বলেই ধরা হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ আম চাষিদের গাছ ও গুটির পরিচর্যায় পরামর্শ দিচ্ছে।

এবছর রাজশাহীতে আমের চাষাবাদ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৩৬ হেক্টর। এবার রাজশাহীতে আমের চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। গত বছর হয়েছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। একই বছর (২০২২) আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৮ গাছ নিয়ে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার হরিয়ানে আম বাগান রয়েছে মোয়াজ্জেম হোসেনের। তিনি বলেন, তার গাছে এবছর আমের মুকুল ফুটতে দেড়িয়ে হয়েছিল। তবে ছয়টি ছাড়া সব গাছেই ৮০ শতাংশের বেশি আমের গুটি রয়েছে। তবে বাগানের দক্ষিণের গাছগুলোর গুটি ঝরেছে। কারণ দক্ষিণের দিকে সূর্যের তাপ ১৬ আনা লাগে। আর উত্তরের গাছগুলোতে রৌদ তেমন লাগলেও ছায়া থাকে বেশি।

তিনি বলেন, কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা পরামর্শ দিয়েছে হালকা পাতলা। তা প্রয়োগ করছি। এছাড়া গুটি ঝরা রোধে আমের গাছের গোড়া খুরে পানি দিচ্ছি। দেখা যাক কতটুকু কাজে লাগে। তবে বৃষ্টির সাথে আবহাওয়া গত একটা ব্যাপার থাকে। বৃষ্টি হলে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বৃষ্টির বিকল্প নেই। এবছর তিনটি বাগানের ৪৫টি গাছ কিনে (টেন্ডার) আমের চাষ করছেন আব্দুস সালাম।

তিনি আরো বলেন, মাচ মাসে বেশ কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এই বৃষ্টি মুকুলের জন্য ভিটামিনের মতো কাজ করেছে। সেই বৃষ্টিতে মুকুলের গায়ে লেগে থাকা মরা ও শুকনা ফুলগুলো ঝরে যায়। একই সাথে আমের পাতা ও মুকুলগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যায়। ফলে মুকুল বা গুটির এ সময়ে যে বিষ ও পানি স্পে করতে হয় সেটি করা লাগেনি।

তিনি বলেন, এবছর কম বেশি সব গাছেই আমের মুকুল এসেছিল। আমের গুটিও ভালো আছে। তবে বৃষ্টিহীন বা তাপমাত্রা বাড়ায় আমের গুটি ঝরা শুরু হয়েছে। এখন যে গুটি ঝরছে সেটা বন্ধ করা না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে আমের বোটার আটা আরো শুকিয়ে যাবে। এতে করে আরো বেশি আমের গুটি ঝরে যাবে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম জানান, গেল কয়েক দিন থেকে প্রতিদিনই রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়ছে। আজ রোববার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটিই। গতকাল শনিবার ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, খরা হলে আমের গুটি ঝরবে এটাই স্বাভাবিক। আমের গুটি ঝরা রোধে আমরা গাছের গোড়ায় পানি দিতে পারি। তাহলে গুটি ঝরা অনেটাই কমে যাবে। তবে বর্তমানে গাছে প্রচুর আমের গুটি রয়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এখান থেকে আরও গুটি ঝরে যাবে। সব গুটি টিকলে আমের গাছ নিতে পারবে না। তবে আমের গুটি ঝরা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। মৌসুমের প্রথমে হওয়া বৃষ্টিতে আমের অনেক উপকার হয়েছে। এখনও রাজশাহীতে ওইভাবে তাপমাত্রা বাড়েনি। যেটুকু আমের গুটি ঝরছে সেটা স্বাভাবিক। কৃষক বা চাষীদের হতাশার কিছু নেই। বেশি গুটি ঝরছে মনে হলে সেচ দিতে হবে। এছাড়া আম চাষিদের গুটি ঝরা রোধে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।