ঢাকাবুধবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৩
  • অন্যান্য

রাজশাহীতে অতি বিরল পরিযায়ী

এপ্রিল ২৬, ২০২৩ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ । ২৩০ জন

চিরাচরিত সুশোভিত গ্রাম শুলিতলা। রাজশাহীর দামকুড়াহাট আর কদমশহরের মাঝামাঝি সে গ্রাম। পুরো গ্রাম ঢেকে আছে শর্ষের হলদে রঙের গালিচায়। মাঝেমধ্যে আখ আর ভুট্টার খেত। সেই শর্ষের গালিচায় অতি বিরল অপূর্ব একটি ঝুঁটিদার পাখিকে নেমে আসতে দেখলাম। শর্ষের গালিচা মাড়িয়ে পাখিটা গিয়ে বসল আখগাছে। এই করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল এক পক্ষী আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়।

এ কান-ও কান হতে হতে সেই ঝুঁটিদারের ছবি নিয়ে আলোচনায় ভরে গেল ফেসবুক। ক্ষুদ্র জনপদ শুলিতলা পক্ষী আলোকচিত্রীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠল। নানা ব্যস্ততায় সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যেতে পারলাম না। পাখিটির আবির্ভাবের দুই সপ্তাহ পর এক বিকেলে পক্ষী আলোকচিত্রী শামীম আলী চৌধুরী, মো. মারুফ রানা আর সুদক্ষ গাইড মো. নাসিমুজ্জামানকে নিয়ে শুলিতলা পৌঁছানো গেল। অটোরিকশা থেকে নেমে ক্যামেরা বের করে খেতের আল ধরে আমরা এগোতে লাগলাম।

পরদিন আবার গেলাম শুলিতলায়। এবার খুব ভোরে। আখখেতের পাশে শর্ষেখেতের আলে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম। পাখিটি আখগাছে নামল ঠিক ৭টা ৫৫ মিনিটে। প্রথমে স্ত্রী, পরে পুরুষ পাখি। এরপর দুটোই একসঙ্গে নামল আখখেতের মাটিতে। থাকল ১৫ মিনিট। এরপর আচমকা ঘন কুয়াশা এসে পুরো মাঠ ঢেকে দিয়ে দ্বিতীয় দিনের যবনিকা টেনে দিল।

যে পাখিটার কথা এতক্ষণ বললাম, সেটি এ দেশের অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি ঝুঁটি ভুরুই। ঝুঁটিয়াল চটক বা ঝুঁটিদার বান্টিং নামেও এরা পরিচিত। তবে সাধারণ নাম বিবেচনায় এদের ঝুঁটিদার বঘেরি বলাই উত্তম। ইংরেজি নাম ক্রেস্টেড বান্টিং, বৈজ্ঞানিক নাম Emberiza lathami। মূল আবাস হিমালয়ের পূর্ব দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। এর আগে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও জামালপুর জেলায় এদের দেখা গেলেও রাজশাহীতে এবারই দেখা গেল। কমবেশি ছয় জোড়া পাখি এসেছিল।

আখের কাণ্ডে স্ত্রী ঝুঁটিদার বঘেরি
আখের কাণ্ডে স্ত্রী ঝুঁটিদার বঘেরিছবি: লেখক

ঝুঁটিদার বঘেরির আকার চড়ুইয়ের মতো। লম্বায় ১৭ সেন্টিমিটার, ওজনে ২২ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে আলাদা। ডানা আর লেজ মরচে-লাল। সুদৃশ্য ঝুঁটিসহ দেহের বাকি অংশ চকচকে নীলচে-কালো। হালকা বাদামি আভাসহ স্ত্রী কালচে-বাদামি। বুকজুড়ে কালো ছিট-ছোপ। ডানা ও লেজ হালকা মরচে-লাল।

ঝুঁটিদার বঘেরি শুকনো ঝোপঝাড়, ঘাসঢাকা সমতল, পরিত্যক্ত জমি ও পাথুরে পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা। একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। গাছের মগডালে বসে থাকে। মাটি আর গাছ থেকে শস্যদানা, বীজ ও পোকামাকড় খায়। সচরাচর ‘টিস্র-টিস্র-টিস্-টস্-টস্-টস্‌’ শব্দে ডাকে।

এপ্রিল থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। সারা জীবনের জন্য জোড়া বাঁধে। পাহাড়ি খাদ, নদীর পাড় বা পাথরের নিচে ঘাস ও ফার্নের গোড়ায় কাপ আকারের বাসা বানায়। পুরুষ পাখি শুকনা ঘাস, লোম, ক্ষুদ্র শিকড় ইত্যাদি উপকরণ সংগ্রহ করে, স্ত্রী পাখি তা দিয়ে বাসা বানায়।

সাদা, ঘিয়ে-সাদা বা পাথুরে হলদের ওপর লালচে-বাদামি থেকে ঘন বাদামি ছিট-ছোপযুক্ত তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী ডিমে তা দেয়, পুরুষ ছানাগুলোকে খাওয়ায়। আয়ুষ্কাল প্রায় চার বছর।-সূত্র প্রথম আলো

Paris