ফসল উৎপাদনে কৃষক-কৃষাণীর যে বিষয়টির অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বীজ। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি। কিন্তু দিনে দিনে কৃষক নিয়ন্ত্রিত কৃষি ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ছে। কৃষির জ্ঞান দক্ষতা এবং বীজের অধিকার কোম্পানিদের দখলে যাচ্ছে। কৃষকের হাতে বীজ নেই।
একসময় গ্রামগুলোতে বহুজাতের শস্যবৈচিত্র্য থাকলেও তা দিনে দিনে কমে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তার দোহাই তুলে দেশি বীজ এবং কৃষকের বীজগুলো দিনে দিনে হারিয়ে ফেলা হয়েছে। সে জায়গায় হাইব্রীড এবং জেনেটিক পদ্ধতিতে বিকাশমুখী বীজগুলো দখল দারিত্ব করছে। আর এই সকল হাইব্রীড বীজ বা জেনেটিক পদ্ধতিতে বিকাশমূখী বীজগুলো কখনোই কৃষক পুনঃপ্রজনন হয় না। প্রতিবছরই কৃষককে বীজ কিনতে হয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। শস্য বীজের একচেটিয়া বাজার দখলে এভাবে নিরবে বীজ সা¤্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করছে কোম্পানিগুলো। এভাবে কৃষক নিয়ন্ত্রিত কৃষি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে দিনে দিনে। কৃষকের হাতে বীজ নেই। একমন শস্যফসল বা ধান বিক্রি করে অনেক সময় এক কেজি বীজ নিতে হচ্ছে কৃষককে। তাই কৃষকদের দাবি বীজ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্টায় দেশি বীজগুলো সুরক্ষা, উন্নয়নে বিশেষভাবে সরকারেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষকের উদ্ভাবন এবং জ্ঞান দক্ষতাগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
“দেশি বীজ সুরক্ষা করে বীজ সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলি,বীজ সাম্রাজ্যবাদ রুখে দাড়াই” উপলক্ষ্যে আজ ( ১০ মে ২০২৩) সকাল ১১ ঘটিকায় রাজশাহীর সবজী ব্যাংক হিসেবে পরিচিত পবা উপজেলার দাদপুর গ্রামে স্থানীয় জাতের চারা ও বীজ বিনিময় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দাদপুর নারী উন্নয়ন সংগঠন এবং উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে উক্ত বীজ মেলায় স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীগণ নিজেদের চাষ করা স্থানীয় দেশিয় জাতের বীজগুলো প্রদর্শন করেন এবং একই সাথে বীজ ও চারা বিনিময় করে। এতে প্রায় ৫০ জন কৃষক কৃষাণী বীজ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। বীজ মেলায় মোট ১৬০ জাতের স্থানীয় শস্য ফসলের বীজ প্রদর্শন করা করা হয়। বীজ মেলায় সর্বোচ্চ ৫৫ জাতের বীজ প্রদর্শন করেন কৃষাণী মোছাঃ শম্পা খাতুন। দ্বিতীয় হন মোছাঃ রুপালি খাতুন ৪৫ ধরনের বীজ প্রদর্শন করে। বীজ মেলাতে অংশগ্রহণ করতে আশ পাশের গ্রামগুলোতে থেকেও কৃষক কৃষাণী এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীগণ অংশগ্রহণ করেন।
কৃষাণী মতিজান বিবি বলেন- আগে আমাদের অনেক বীজ ছিলো, অনেক জাত ছিলো, কিন্তু পর পর কয়েকবছর হাইব্রীড জাতগুলো চাষ করার কারনে দেশি জাতগুলো হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু অনেক পওে বুঝতে পারলাম, আমরা সবজি, ধান এবং অন্যান্য ফসলের বীজগুলো হারিয়ে নিজেরা ঠকেছি করেছি।
তিনি আরো বলেন, এখনতো বীজ কেনা ছাড়া আর কোন গতি নেই। দাম যতোই ধরুক, বীজতো কিনতেই হয়। তিনি দাবি করেন- আমাদের দেশি বীজগুলো সুরক্ষা এবং উন্নয়ন করার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক। যাতে বীজ থেকে আমাদেও বীজ তৈরী করতে পারি।
বীজমেলাটি সঞ্চালনা ও ধারনাপত্র পাঠ করেন বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারি মোঃ শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন- প্রতিবছর কৃষক বীজ কিনছে, দামও বেড়েছে প্রচুর। বীজের নিয়ন্ত্রণ এভাবে কৃষকের হাতে না থাকলে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষকদেও জিম্বি কওে ফেলবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তিনি আরো বলেন- বীজ সার্বভৌমত্ব হলো একজন কৃষক নিজে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, ব্যবহার, বিনিময় এবং বিক্রি করার অধিকার। আর সেই অধিকার থেকে কৃষক দিনে দিনে বঞ্চিত হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে কৃষকরা যে সকল নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন করছে, সেগুলোর কোন স্বীকৃতি দিচ্ছে না সরকার। নানা জটিলতার বেড়াজালে সেগুলো আটকে দেয়া হচ্ছে।