অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বঙ্গোপসাগরে দুর্বল হয়ে পড়েছে; কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করায় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগের সে ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশও এক ফেসবুক পোস্টে জানান, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মানুষের জন্য সু-সংবাদ আছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র যখন সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমারের মংডু জেলার মধ্যবর্তী স্থানের উপর দিয়ে অতিক্রম করা শুরু করেছে সৌভাগ্যক্রমে ঠিক ঐ সময়ে সমুদ্রে ভাটার শুরু হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে প্রতি ৫ থেকে ১০ বছরে ১ টা মাত্র সুপার-সাইক্লোন সৃষ্টি হয়। যদিও এবারে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ৩ বছরে পরে সুপার-সাইক্লোন মোখা সৃষ্টি হলও। সৌভাগ্যক্রমে ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে সমুদ্রের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ে; এরপরে স্থলভাগে আঘাত করার সময় প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হচ্ছে।”
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৫-২০ কি.মি. বেগে অগ্রসর হচ্ছে; বেলা ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে মূল আঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ২০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৯.৭° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২.৪° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ দুপুর ১২টায় (১৪ মে ২০২৩) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কি.মি. দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।
কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রমরত ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আজ বেলা ৩টা নাগাদ উপকূল এবং সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা নাগাদ সিটুয়ের (মায়ানমার) নিকট দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এর আগে আবহাওয়াবিদ সুষ্মিতা বড়ুয়া জানিয়েছিলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা এর প্রভাবে মায়ানমার অংশে যেভাবে জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব পড়বে তার তুলনায় বাংলাদেশের অংশে কমপক্ষে ১ থেকে ২ মিটার কম জলোচ্ছ্বাস হবে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের পূর্ববর্তী পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এর আগে আবহাওয়াবিদরা আশংকা করেছিলেন, অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় প্রথম ও শক্তিশালী আঘাতটি হানবে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩.৬ মিটার গড় উচ্চতার এই দ্বীপে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসেরও আশঙ্কা করা হয়। যেখানে এই মুহুর্তে জীবন শঙ্কা নিয়ে অবস্থান করছেন নারী-শিশুসহ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ।
সেন্টমার্টিনে সকাল ৭টা থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে বইতে থাকে ঝড়ো হাওয়া, দ্বীপের কাছে সাগর ছিল উত্তাল। সকাল আটটায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব জানান সেন্টমার্টিনের ৪ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজির হোছেন।
তিনি বলেন, “রাতে আশ্রয়কেন্দ্র ও হোটেলে আশ্রয় নেওয়া লোকজন সকালে বাইরে বেড়িয়ে এসেছেন। আমরা তাদের খাবার তৈরী করে আবারও নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যেতে প্রচারণা চালাচ্ছি।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।- সূত্র: বিটিসি নিউজ