আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান পরিষদের কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলররা আবারও সিটি করপোরেশনে ফিরতে চান।
রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনের সবাই মনোনয়নপত্র তুলেছেন। এই ৪০ জনের প্রায় সবাই মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। আজ (মঙ্গলবার) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন।
এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তবে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত বর্তমান পরিষদের সব কাউন্সিলরই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কাউন্সিলররা ছাড়াও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দল থেকে বহিষ্কারের হুংকারকেও তারা পাত্তা দেননি। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতও।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১০ জন মনোনয়নপত্র তুলেছেন নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির আশরাফুল হাসান বাচ্চু। তিনিও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি ছাড়া এ ওয়ার্ডে আরও চারজন বিএনপির নেতা মনোনয়নপত্র তুলেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের তিনজন এবং জামায়াতের একজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্য দুজনের মধ্যে একজন কোন দলের নয় এবং অন্যজন জাতীয় পার্টির নেতা।
সবচেয়ে কম মনোনয়নপত্র উঠেছে নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে শুধু বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের রবিউল ইসলাম সরকার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। শামসুল ইসলাম নামের একজনও নির্বাচনের কথা ভাবছেন। এরপর সবচেয়ে কম প্রতিদ্বন্দ্বী ১, ১৩, ২১ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রজব আলী। তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তার সঙ্গে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগেরই সমর্থক হিসেবে পরিচিত একজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম। এই ওয়ার্ডে জামায়াতের একজনসহ চারজন মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবদুল মমিন। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চান যুবলীগের বেলাল হোসেন।
২১ নম্বরের বর্তমান কাউন্সিলর সিটি করপোরেশনের আগের পরিষদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবারও তিনি কাউন্সিলর হতে চান। এই ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর ছোট ভাই যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন।
২৩ নম্বরের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মো. মাহাতাব। তিনি জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তার সঙ্গে নির্বাচন করতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কামাল হোসেন এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বিএনপির দুজন ও যুবলীগের এক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসছেন।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির রুহুল আমিন টুনু। তার সঙ্গে বিএনপির আরও একজন নির্বাচনে আসছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আরও দুজন নির্বাচনে আসছেন।
বিভিন্ন দল করে এখন আওয়ামী লীগে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. কামরুজ্জামান। তার সঙ্গে এবার বিএনপি, জামায়াত ও ওয়ার্কার্স পার্টির একজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান টুকুও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক সমর্থক এবং বিএনপির একজন নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে।
নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ওয়ার্কার্স পার্টির মতিউর রহমান মতিও এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে নির্বাচনে আসছেন।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এসএম মাহাবুবুল হক পাভেলও এবার নির্বাচনে অংশ নেবেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসছেন আরও তিনজন। পাভেলের বাবা জামায়াতের রোকন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারা গেলে উপনির্বাচনে রাসিকের বর্তমান পরিষদের কাউন্সিলর হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাসেল জামান। এবার ভোটে জিতে নিজের পদ ধরে রাখতে চান তিনি। তাই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন দুজন।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্বাস আলীও এবার ভোটে আসছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন আরও চারজন।
১১ নম্বর ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের রবিউল ইসলাম তজুসহ ৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এরমধ্যে সাবেক কাউন্সিলর বিএনপির আবু বাক্কার কিনুও আছেন। এখানে বিএনপির আরও দুজন প্রার্থী হতে চান।
রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগের এই সমর্থক এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চান তিনজন।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন আনার। এবারও ভোটে অংশ নিচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
১৫ নম্বরের বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন এবারও ভোটে আসছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দুজন এবং যুবলীগের একজন। তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
১৬ নম্বরের কাউন্সিলর বিএনপির নেতা বেলাল হোসেন এবারও ভোটে আসছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বিএনপির একজন ও আওয়ামী লীগের দুজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
১৭ নম্বরের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের শাহাদত হোসেন শাহু এবারও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার সঙ্গে ভোটে লড়তে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরও একজন এবং কোন দল করেন না এমন একজন প্রার্থী হচ্ছেন।
১৮ নম্বরের কাউন্সিলর যুবদলের সাবেক নেতা শহিদুল ইসলাম পচা এবারও নির্বাচনের মাঠে। আওয়ামী লীগের ঘাড়ে উঠে আবার কাউন্সিলর হতে চাইছেন তিনি। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটে আসছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহুরুল ইসলাম। এছাড়া আরও চারজন প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগেরই দুজন।
১৯ নম্বরের কাউন্সিলর সাবেক যুবলীগ নেতা তৌহিদুল হক সুমন এবারও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার সঙ্গে যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ভাই আবদুল হামিদ সরকার টেকন। এবার তার সঙ্গে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আরও দুজন।
২৪ নম্বরের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আরমান আলী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন আরও দুজন। এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নব্য আওয়ামী লীগ তরিকুল আলম পল্টু। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একজনসহ তিনজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিএনপি পরিবারের সন্তান। তিনিও ভোটের মাঠ ছাড়েননি। তাঁর সঙ্গে প্রার্থী হচ্ছেন আরও পাঁচজন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন ও জামায়াতের একজন।
নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপির প্রবীণ নেতা আনোয়ারুল আমিন আযব। তিনিও ছাড়েননি ভোটের মাঠ। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুজনসহ মোট তিনজন মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন।
২৯ নম্বরের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের মাসুদ রানা। তার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে আসতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের একজন করে তিনজন। আরও দুজন আজ (মঙ্গলবার) মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন।
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের শহিদুল ইসলাম পিন্টু। তিনি ভোটে আসছেন। তবে তাকে ছাড় দিতে নারাজ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন। তিনিও ভোটে আসছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরও দুজন এবং জামায়াতের একজন প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার নানা কারণে বিতর্কিত। তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের অভিযোগও আছে। তিনি আবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
রাসিকের সব সাধারণ কাউন্সিলরের মতো সংরক্ষিত নারী আসনের ১০ কাউন্সিলরের সবাই এবার ভোটে অংশ নিতে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন। বিএনপির যে কোন সমাবেশে শ্লোগানে শ্লোগানে মাঠ কাঁপিয়ে তোলা মহিলা দল নেত্রী সামসুন নাহার এবং মুসলিমা বেগম বেলীও বাদ থাকেননি। ২০১৮ সালের মতো এবারও তারা সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হতে চান।
রাসিকের সংরক্ষিত ১ নম্বর আসনের কাউন্সিলর তাহেরা খাতুন মিলি প্যানেল মেয়র-৩ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এবারও তিনি নির্বাচন করছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, আজ (মঙ্গলবার) প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২৫ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। ২ জুন বরাদ্দ করা হবে প্রতীক। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে প্রচার-প্রচারণা। ২১ জুন ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। রাইজিংবিডি