ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৫ মে ২০২৩
  • অন্যান্য

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অ্যাডভকেটদের সংবর্ধনা ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক সেমিনার

মে ২৫, ২০২৩ ৫:৩১ অপরাহ্ণ । ৭৪ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের আয়োজনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক তালিকাভুক্ত নতুন অ্যাডভকেটদের সংবর্ধনা ও স্নায়ু যুদ্ধের যুগে আন্তর্জাতিক আইন অধ্যয়নের উপর আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ মে) বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দুই ধাপে আইন ও মানবাধিকার বিভাগ কর্তৃক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সকাল সাড়ে ৯ টায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক তালিকাভুক্ত নতুন অ্যাডভকেটদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন উক্ত বিভাগের প্রভাষক রুবাইদা এলিন সুধা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব হাফিজুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. আশিক মোসাদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ফয়জার রহমান ও রেজিস্ট্রার সুরঞ্জিত মন্ডলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন আইন ও মানবাধিকার বিভাগের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর আবু নাসের মো. ওয়াহিদ।
শুরুতেই ফুল দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এরপর সদ্য নিয়োগপ্রাপÍ আইনজীবীদের ফুল দিয়ে বরণ ও ক্রেস্ট বিতরণ করেন উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতি মহোদয় ও সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।

বক্তব্য পর্বে প্রধান অতিথি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জনাব হাফিজুর রহমান খান প্রথমেই নতুন আইনজীবীদের অভিনন্দন জানান। এসময় তিনি নতুন আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন এবং কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অ্যালামনাই এসোসিয়েশন তহবিল সংগ্রহের কাজ চলছে। এই তহবিল বিনিয়োগ করে যে প্রফিট আসবে তা থেকে স্কলারশিপ ও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। তিনি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেন, আইন উপদেষ্টা নিয়োগের সময় যেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যারা আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।’ তিনি নতুন আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে সমাজের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতে বলেন।

প্রফেসর ড. আশিক মোসাদ্দিক তার বক্তব্যে নতুন আইনজীবীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আইন ও মানবাধিকার বিভাগ বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্ট ডিমা-েবল বিভাগ। এই বিভাগ শিক্ষার্থীদের বর্তমান যুগের চাহিদা অনুপাতে গড়ে তোলে।’ এছাড়া আইনজীবীদের পেশাগত নতুন জীবন নিয়ে দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন তিনি।

নতুন আইনজীবীদের মধ্য থেকে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন অ্যাড. মোছা. আসমা আক্তার। নতুন আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ফয়জার রহমান ও রেজিস্ট্রার সুরঞ্জিত মন্ডল দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় তারা নতুন আইনজীবীদের অভিনন্দন জানান এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রফেসর আবু নাসের মো. ওয়াহিদ। তিনি আইন শিক্ষার ভবিষ্যৎ ও আইন পেশার গুরুত্ব এবং বিভিন্ন আইনগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, ‘আইন শিক্ষার্থীদের কাছে পাঞ্জেরীর মতো’। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
সকাল সাড়ে ১১ টায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় স্নায়ু যুদ্ধের যুগে আন্তর্জাতিক আইন অধ্যয়নের উপর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সেমিনার। সঞ্চালনা করেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও মানবাধিকার বিভাগের প্রভাষক সাদিয়া ইসলাম। সেমিনারে মূলবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন আইন ও মানবাধিকার বিভাগের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর আবু নাসের মো. ওয়াহিদ।

প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক আইনের পরিধি তুলে ধরেন। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক আইনের প্রভাব ও স্নায়ু যুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের কি করণীয়, শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি আলোচনা করেন। পাশাপাশি আলোচনা করেন আন্তর্জাতিক আইনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে । প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান আন্তর্জাতিক আইন ও দেশীয় আইনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করেন। এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের আইন শিক্ষা ও গবেষণামুলক কাজে লিপ্ত থাকার জন্যে উপদেশ প্রদান করেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেন প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম ও প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানের মূলবক্তা প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের কো-অর্ডিনেটরকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ সম্পর্কে তার লেখা একটি বই উপহার প্রদান করেন।


উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক। তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুরি বিশ্ববিদ্যালয় ইমেরিটাস প্রফেসরের সম্মানে ভূষিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৯৮ কাউন্সিল সভায় তাকে ইমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে গ্রহণ করে। তাঁর শিক্ষকতা, রিসার্চ, অ্যাডমিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আনুগত্য তাঁকে এই উপাধি পেতে সাহায্য করেছে বলে জানা গেছে। প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম বর্তমানে ম্যাককুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর এবং ম্যাকওয়ারিল স্কুলে আইন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা (পিএইচডি এবং এমফিল ডিগ্রি)-এর পরিচালক হিসেবে আছেন।

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে অর্থনীতিতে বি.এ. অনার্স এবং এমএ অর্জন করেন এবং ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে এলএলবি এবং ১৯৭৯ সালে তিনি এলএলএম লাভ করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

এছাড়া তিনি পাপুয়া নিউ গিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতার বাঁকে বাঁকে আন্তর্জাতিক আইনে লিখেছেন অনেক বই ও আর্টিকেল। তাঁর গবেষণালব্ধ গ্রন্থ বাংলাদেশসহ বিশে^র অনেক দেশকে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রায়ালকে গতিশীল করতে গাইড লাইন হিসাবে বিবেচিত। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একাডেমিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইমেরিটাস প্রফেসর সম্মানে ভূষিত হলেন। তিনি বাংলাদেশকে করেছেন গর্বিত ও সম্মানিত।

প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান শুরুতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৮৯ সালে একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানকে ‘অধ্যাপক এন আর মাধব মেনন সেরা আইন শিক্ষক পুরস্কার ২০১০’ প্রদান করা হয়েছে, যা সার্ক অঞ্চলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আইন শিক্ষক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশে-বিদেশে গবেষণা জার্নালে তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে পেশাগত আইনি শিক্ষার প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়কারী। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের জন্য মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন উদ্ভাবনী এবং ব্যবহারিক কোর্স প্রবর্তন এবং ডিজাইন করার ক্ষেত্রে একজন অগ্রগামী। তিনি বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ এবং আইএলও সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক আইনি ব্যবস্থায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি মস্কোর ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় এলএলএম, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রিও অর্জন করেছেন।

অনুষ্ঠনের শেষ ভাগে সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এসময় তিনি পরিবেশগত আইন ও আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করেন। পরিশেষে তিনি সবার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেন এবং অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Paris