ঢাকাবুধবার , ৭ জুন ২০২৩

জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া ৭ শিক্ষক চাকরিচ্যুত, দিতে হবে বেতন ফেরত

জুন ৭, ২০২৩ ৭:১৬ অপরাহ্ণ । ১৯০ জন

জাল সনদের আশ্রয় নেওয়ায় নীলফামারীর ডিমলায় সাত শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বেতন-ভাতা বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে, এসব শিক্ষকের অনেকের দাবি, সনদ জাল না।

উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় জানায়, বিষয়টি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে শুনেছেন। এখনো মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা হাতে পাননি। অভিযোগ ওঠা শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করান।

শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে, ডিমলায় ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাত শিক্ষক জাল সনদের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয় শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতা তুলেছেন। এক শিক্ষক এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বেতন-ভাতা পাননি। এমপিওভুক্ত না হওয়া শিক্ষক হলেন উপজেলার জটুয়াখাতা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন।

জাল সনদে এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষকেরা বিভিন্ন অঙ্কে বেতন বাবদ সরকারি তহবিল থেকে ৬১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬ টাকা তুলেছেন। এর মধ্যে সোনাখুলি চাপানি সৈকত নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষিশিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফ হোসেন ১১ লাখ ১২ হাজার ৪৮৭ টাকা, জটুয়াখাতা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুর রহমান ২ লাখ ৮ হাজার, খগাখড়িবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নাজিফা আলম ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০, বালাপাড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আনারুল হক ১১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৮, দক্ষিণ কাকড়া সাইফুন সাইড নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ১৬ লাখ ২০ হাজার ২৪৮ ও তিস্তা কলেজের কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯৩ টাকা তুলেছেন।

গত ১৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করতে বলা হয়েছে মাউশিকে।

চিঠিতে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অবৈধভাবে নেওয়া বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া, যারা অবসরে গেছেন তাঁদের অবসর সুবিধা বাতিল করা। স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় করা। জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

সনদ জাল নয় বলে দাবি করেছেন অভিযোগ ওঠা কয়েকজন শিক্ষক। এ আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে তাঁরা মামলা করার কথা জানান। সনদ আসল বলে দাবি করে দক্ষিণ কাকড়া সাইফুন সাইড নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আপিল করব কিংবা আদালতের আশ্রয় নেব। আমি বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছি।’

জটুয়াখাতা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আলম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক সাইফুর রহমান ও আশরাফ হোসেনের সনদ জাল হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মৌখিকভাবে জেনেছি। এ বিষয়ে কাগজপত্র হাতে পেলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাত শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছেন বলে জানান উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আমির বোরহান। তিনি বলেন, ‘এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নোটিশ পেয়েছি। অভিযোগ ওঠা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

আজকের পত্রিকা

Paris