আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে জাতীয় পার্টি চার বার সাহায্য করেছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন।
এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে চুন্নু বলেন, আপনি কী পারেন না; বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে, যা যা করা দরকার সবাইকে নিয়ে সেই উদ্যোগ নিন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর হরমান ও শফিকুর রহমানের বাজেট আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জি এম কাদের তথ্য ছাড়া কোনো কথা বলেন না। গোলাম মোহাম্মদ কাদের যদি বলে থাকেন বাংলাদেশ নীরবে শ্রীলংকা হয়ে গেছে, আপনারা প্রমাণ করুন যে না বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয় নাই, তথ্য দিয়ে বলেন। বিএনপি নেতা আমির খসরু বললে মানায় উনি (জিএম কাদের) বললে মানায় না। উনি কি আপনাদের কথা বলবেন আশা করেন? আপনার বাড়ির কাছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ৫ লাখ টন কয়লা চুরি হয়ে গেছে, এটার খবর রাখতে পারেন না। ৫০০ কোটি টাকা দাম। আরেক জন বলেছেন, শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে এই ধরনের অসত্য কথা বলা হচ্ছে। আমার এইখানেই প্রশ্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখানে আছেন। জিএম কাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কী কী সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন? জিএম কাদের সাহেব বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে যে সুযোগ সুবিধা পান এর বাইরে আর কী সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা জানান। জিএম কাদের এমপি হিসাবে রাজউক থেকে একটা প্লটও নেননি।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা কি করেছি এখন একটু বলি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিয়েছিলো। জেল কোড ভঙ্গ করে খালেদা জিয়া এরশাদ সাহেবের কাছে জেলের মধ্যে লোক পাঠান, তিনি সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পাঠির সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু জিএম কাদের তার ভাইকে (এরশাদ) বলেছিলেন, না আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে। ২০১৪ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচন করবেন না। বিএনপিও করবে না। সেদিন নির্বাচন না হলে অগণতান্ত্রিক সরকার আসার সম্ভবনা তৈরি হতো। এরশাদের কথা না শুনে সেদিন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার কতিপয় এমপি নির্বাচন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাক্ষী। তখন আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা আমাকে বলেছিলেন, এই চুন্নু মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে। দেশের অবস্থা দেখ না। নির্বাচন কি সম্ভব হবে? জান থাকবে? প্রাণ থাকবে? নেত্রীর মাথা নষ্ট, তোমাদেরও মাথা নষ্ট। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, নাম বলতে পারব। প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, তারা কী বলে? তখন তিনি বললেন, নির্বাচন হবে। অন্য কাউকে বসতে দেব না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করতে চাই। তোমরা নির্বাচন করো। আমরা নির্বাচন করলাম। আমাদের তিনজনকে মন্ত্রী করা হলো। এক সঙ্গে চললাম। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করেছে জাপা। আমরা কি তিনবার, চারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য সাহায্য করি নাই। তাহলে এত কথা বলেন কেন? কী সুযোগ সুবিধা আমরা নিলাম?
চুন্নু আরও বলেন, এই সংসদে বারবার বিএনপির নাম বলে তাদেরকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আপনারা আমাদের সমালোচনা করেন। আমাদের বিরুদ্ধে বলেন সমস্যা নেই। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে বলবো, কারণ আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলি। কিন্তু আপনারা চান আমরা আপনাদের খয়ের খাঁ হয়ে থাকবো। সাড়ে তিনশ এমপির মধ্যে তিনশর ওপরে আপনারা। আপনাদের ভালো কাজের কথা আপনারা বলেন। মানা করছে কে? কিন্তু আপনারা কেন আশা করেন আমরা আপনাদের পক্ষে কথা বলবো? আমরা তো বিরোধী দল। আমরা সরকারের ত্রুটির কথা বলবো। আমরা সরকারের দুর্নীতি প্রশাসনের অনিয়মের কথা বলবো। আগাামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচন করবে। কারো পক্ষে বিপক্ষে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই।
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন এর সাথে বাস্তবতার মিল নেই। এই বাজেটে আমরা রাজস্ব আয় দিয়ে রাজস্ব ব্যয় মিটাবো। উন্নয়নের জন্য এক পয়সাও না, ঘাটতি বাজেট যেটা সেটা ঋণ করবো দেশে বিদেশে বিভিন্ন সুত্রে সেখান থেকে উন্নয়ন বাজেটে ব্যয় করা হবে। চার্বাক দর্শনে আছে, যতদিন বাঁচ সুখেই বাঁচ, প্রয়োজন হলে ঋণ করে ঘি খাও। বাজেটটা এইটাই হয়েছে যে আমরা ঋণ করে ঘি খাবো। আমাদের অর্থমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রণালয় চার্বাক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে। ঋণ করেও উন্নয়ন করতে হবে এই দর্শনে খেসারত যে কি ভয়াবহ হতে পারে বেশি দূর যাওয়ার দরকার নাই, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা। আমি অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, কেন কতিপয় গোষ্ঠীর বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা চার্জ দেওয়া হবে। আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা করে কর দেওয়া কতটা নৈতিক। করযোগ্য আয় না থাকলেও কর দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার করতে হবে।
বাংলানিউজ