ঢাকাশনিবার , ২২ জুলাই ২০২৩

জলবায়ু নিয়ে ভয়ঙ্কর বার্তা, আশঙ্কাজনকভাবে রেকর্ড ভাঙছে

জুলাই ২২, ২০২৩ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ । ২৪৯ জন

বিশ্ব জুড়ে একের পর এক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, এবং মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে বরফস্তর যে রেকর্ড গতিতে ভাঙছে তাতে রীতিমত শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন যেরকম দ্রুত গতিতে এবং যে সময়ের মধ্যে এসব রেকর্ড ভাঙছে তা “নজিরবিহীন”।

জাতিসংঘ বলছে ইউরোপ জুড়ে যে তাপপ্রবাহ চলছে তা আরও রেকর্ড ভাঙার দিকে এগোচ্ছে।

এসব নজিরবিহীন রেকর্ড জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা তা এখুনি হলফ করে বলা কঠিন, কারণ আবহাওয়া এবং পৃথিবীর মহাসাগরের আচরণ খুবই জটিল।

এগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই শঙ্কিত যে ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতি ঘটতে চলেছে।

“আমার এমন কোন সময়ের কথা জানা নেই যখন আবহাওয়া মণ্ডলের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বত্র এধরনের রেকর্ড ভাঙা এবং অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে,” বলছেন লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের পরিবেশ বিষয়ক ভূগোল বিশেষজ্ঞ টমাস স্মিথ।

“পৃথিবী এখন লাগামহীন পরিবর্তনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে” যার পেছনে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে ঘটা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং ২০১৮ সাল থেকে ‘এল নিনো’র প্রভাবে প্রথম পৃথিবীর গরম হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু – বলছেন লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানের লেকচারার ড. পল সেপ্পি।

এল নিনো প্রকৃতি গরম হয়ে ওঠার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা হয় যখন প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে সমুদ্রের তপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে উঠে যায়, যার প্রভাবে প্রকৃতি গরম হয়ে ওঠে।

এখানে তুলে ধরা হল এবছর গ্রীষ্ম মরশুমে যে চারটি রেকর্ড ভাঙা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা গেছে এবং এর প্রভাব কী হতে পারে।

পৃথিবীতে সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ড

এবছর জুলাই মাসে ছিল এ যাবৎ পৃথিবীতে সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ড। ২০১৬ সালে বিশ্বে গড় সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার যে রেকর্ড ছিল এবারের তাপমাত্রা তাকে ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসে দাবানল ২১ জুলাই ২০২৩
ইউরোপের অনেক জায়গায় চলছে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ। শুক্রবার গ্রিসে দমকল কর্মীদের ৮০ টি দাবানল আয়ত্তে আনতে হিমশিম খেতে হয়

এবার প্রথমবারের মত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৭ সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। ইইউর জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপার্নিকাস জানাচ্ছে ৬ জুলাই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.০৮।

তেল, কয়লা ও গ্যাসের মত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে যে কার্বন নিগর্মণ হচ্ছে পৃথিবীর ক্রমশ গরম হয়ে ওঠার পেছনে সেটাই বড় কারণ।

ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের আরেকজন জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ফ্রেডেরিকো অটো বলছেন গিনহাউস গ্যাস থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়া ঠেকানো না গেলে এমনটাই ঘটবে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছিল।

“এর জন্য মানুষই দায়ী,” তিনি বলছেন।

“আমি যে কারণে বিস্মিত সেটা হল জুন মাসে যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড ভাঙছে। বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এত তাড়াতাড়ি এমনটা ঘটার কথা নয়,” তিনি বলছেন।

তিনি বলছেন, এল নিনোর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে, কিন্তু সেটার প্রভাব এত তাড়াতাড়ি দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক।

বিশ্ব জুড়ে সবচেয়ে গরম মাস ছিল জুন

এবছর জুন মাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল জুনের স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ১.৪৭ সেলসিয়াস বেশি। এই বৃদ্ধি হিসাব করা হয় পৃথিবীতে শিল্পোন্নয়ন ঘটার আগের সময়কার সঙ্গে তুলনা করে।

১৮০০ সাল নাগাদ বিশ্বে শিল্প বিপ্লব ঘটার পর থেকে মানুষ আবহাওয়া মণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করছে অনেক বেশি।মানুষের কার্যকলাপের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে

মানুষের কার্যকলাপের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে

ড. স্মিথকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এক দশক আগে তারা কি বুঝতে পেরেছিলেন ২০২৩ সালের গ্রীষ্ম মরশুমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই পর্যায়ে পৌঁছবে?

তার উত্তর ছিল জলবায়ুর যে মডেল ধরে পূর্বাভাস দেয়া হয় তাতে দীর্ঘমেয়াদে কী ঘটতে যাচ্ছে তার পূর্বাভাস দেয়া যায়, কিন্তু আগমী দশ বছরে কী ঘটবে তা বলা কঠিন।

“১৯৯০এ আবহাওয়ার আচরণের যে মডেল ধরে আমরা কাজ করেছিলাম তাতে আজকের অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটা সঠিক ধারণাই পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু আগামী দশ বছরে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে তার সঠিক পূর্বাভাসিএখন দেওয়া কঠিন হবে,” তিনি বলেন।

পৃথিবী এই সময়ের মধ্যে যথেষ্ট ঠাণ্ডা হবে না বলেই তার মত।

বিবিসি বাংলা

Paris