রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন তার মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
তিনি বলেন, এই ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে আমরা ন্যায়বিচার পেলাম।
এর জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। দীর্ঘ এ প্রতীক্ষা আমাদের কীভাবে কাটতে হয়েছে তা আর কীভাবে বলবো! তবে এত বছর পরও আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আইনজীবী, বিচারক এবং সর্বপরি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।
সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, আমরা তো বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনি। বাবাকে স্পর্শ করতে পারিনি। এই চাপা কষ্ট আর কান্নার কথা কাউকে কীভাবে বলবো। এই নিদারুণ কষ্ট কোনো দিন ভুলবার নয়। আমার বাবাকে ২০০৬ সালে নির্মমভাবে হত্যা করে ম্যানহলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কী দোষ ছিল আমার বাবার? কেন এমন নির্মমতা?
ড. তাহেরের মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, আমি এই দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া কার্যকরে নিরপেক্ষভাবে সহযোগিতা করায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি মনে করি, আইন, আইনের গতিতেই চলেছে। এজন্য দেরিতে হলেও ন্যায়বিচার বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। হয়তো এত দিনে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।
সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে পড়ার সময় স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করবেন। বিশ্ব ভ্রমণ করবেন। তবে বাবার নির্মম হত্যার বিচারের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর ঘুরতে হয়েছে আদালত প্রাঙ্গণ। তিনি ২০০৫ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। প্রথমে বাবাও সায় দেন। এরপর তার বাবাকে যখন হত্যা করা হলো, তখন তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মনে অনেক স্বপ্ন ছিল। ইচ্ছে ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি বা অন্য কোথাও কাজ করবেন। শিক্ষক হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা হত্যার বিচারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। আর এ মামলায় রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত তার মা সুলতানা আহমেদ ও ভাই সানজিদ আলভি আহমেদেরও সমান কৃতিত্ব রয়েছে।
এদিকে,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর দুই খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রি. জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। প্রথমে ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয়। তার ফাঁসি কার্যকরের পর অপর আসামি জাহাঙ্গীর আলমকেও ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এ সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মো. কামাল হোসেন, রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলা সুপার আবদুল জলিল, জেলার নিজাম উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা ফাঁসির মঞ্চের কাছে উপস্থিত ছিলেন।