ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তীব্র গতিতে ভাঙছে পদ্মা, কিছুই করার নেই পাউবো’র

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩ ৯:২৭ অপরাহ্ণ । ১২৪ জন

পদ্মা নদীর পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে চলছে তীব্র ভাঙন। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ভূ-সম্পত্তি। সহায়-সম্বল হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- আপাতত কিছু করার নেই তাদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বড় প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই প্রকল্পের অনুমোদনে লাগবে দীর্ঘ সময়। এ সময়ের মধ্যেই দুই ইউয়িনের মানচিত্রই ততদিনে বদলে যাবে, শঙ্কা স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা বলছেন- শিবগঞ্জ উপজেলার দশরশিয়া এলাকা থেকে ভাটিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন চলছে। গত এক সপ্তাহেই নদীর পুরো তীরজুড়ে ভাঙতে ভাঙতে ৩০০ মিটার ভেতরে চলে এসেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়ন। এ দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ইউনিয়ন পরিষদের ভবনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

কয়েকদিন আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে নারায়ণপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়টি। হুমকির মুখ রয়েছে নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসা থেকে কয়েক মিটার দূরেই নদীর অবস্থান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে  আতঙ্কের ছাপ।

মাদ্রাসার শিক্ষক আজিজুর রহমান জানান, ইউনিয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। তারপরও তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের। কিন্তু যদি মাদ্রাসাই না থাকে তাহলে পাঠদান দিবেন কিভাবে।
তিনি বলেন- যেভাবে ভাঙন চলছে তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ভবনটি নদীগর্ভে চলে যাবে। কলেজের পর মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এ এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন- গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নদী ভাঙন চলছে পদ্মায়। অথচ এখনো ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল সামান্য। কিন্তু নদী ভাঙন ঠেকানো যায়নি।

ছাব্বিররশিয়া-সরদারপাড়ার গোলাম মত্তুর্জা প্রায় ৩২ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে পৈত্রিক ভিটা হারিয়েছিলেন। পরে ছাব্বিররশিয়া-সরদারপাড়ার এসে বসত গড়েন। এই বসত-ভিটাও হুমকির মুখে। বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে নদীর অবস্থান। তিনি বলেন- এই বসত-ভিটা হারিয়ে গেলে কোথায় যাবো, কি করবো কিছুই জানি না। আগেরবার বাড়ি ভেঙে আসার সময়ও খুব কষ্ট হয়েছিলো। আবারো বাড়ি-ঘর ভেঙে নিয়ে যেতে কষ্ট হবে। কিন্তু আমাদের কি-বা করার আছে। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু দেখেন তাহলে হয়তো রক্ষা হতে পারে। না হলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে আমাদের।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বেনজির আহম্মেদ জানান, ইউনিয়নের মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নদী ভাঙন তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আতঙ্ক আরো বেড়েছে। মানুষ তাদের কাছে এসে নদী রক্ষায় কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানতে চায়। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারি না। তবে নদী ভাঙনের তীব্রতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা কিছুই চাই না। শুধু রক্ষার বাঁধ চাই। এটা এখন নারাণয়পুরবাসীর প্রাণের দাবি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান গত বছর অস্থায়ীভাবে নদী ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিলো। কিন্তু সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজে আসেনি। যে কারণে এ বছর অস্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাঙন প্রতিরোধ করতে হলে পদ্মা নদীর ৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। প্রতি কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী ৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এত বড় অঙ্কের টাকার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। তারপরই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে।

রাইজিংবিডি

Paris