রাজশাহীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সিজিএস- এর আঞ্চলিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজশাহীর রয়্যাল রাজ হোটেল এবং কনডমিনিয়ামে রাজশাহী ও রংপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তাদের প্রধান চ্যালেজ ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)- এর সহযোগিতায় এ আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এই অঞ্চলে অভিযোজিত কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা দেশব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের সংকটের জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন অংশীজনদের কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে সে সম্পর্কে মূল সুপারিশগুলি তুলে ধরেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
আলোচনার শুরুতে উদ্যোক্তারা তাদের করোনাকালীন সময় প্রধান চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সরকার পর্যায়ে প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে আসে, যার মধ্যে প্রণোদনা সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের অজ্ঞতা এবং সরকার থেকে এই ব্যপারে যথেষ্ট প্রচারণার অভাব পরিলিক্ষিত হয়। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের তথ্য সকল ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এই প্যাকেজে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তা অকল্পনীয়। প্রণোদনার টাকা পেতে তাদের ১০৯/১৫%/২০% টাকার কমিশনও দিতে হয়েছে। এই প্রণোদনা কি তাহলে শুধু মাত্র গুটিকয়েক ব্যবসায়ীদের জন্য ছিলো কিনা, এই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে কিছু উদ্যোক্তারা বিসিক থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে এবং এজন্যই ব্যবসা পুনরায় পরিচালনা করার কথা বলেছেন। কোভিড এর কারণে অনেকের ব্যবসা-শোরুম বর্ষ হয়ে যায়। বাসা থেকে অনলাইনে কাজ ক্রতে বাধ্য হন। কিন্তু অনলাইনে ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে আর্থিকভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কথা বলেছেন উদ্যোক্তারা।
মহামারীর সময় দুর্নীতি অনেক বেশি হয়েছে। স্থানীয় সরকার চার এবং কোন এনজিও থেকে সাহায্য না পেয়ে সবাই তাদের নিজস্ব সঞ্চয় দিয়ে চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
এছাড়াও আলোচনা সভায় ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির অসুবিধার কথাও উঠে এসেছে। ব্যাংক ঋণ গ্রহণের অন্যতম মূল অসুবিধা হলো জামিন্দার হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা থাকার আবশ্যকতা যা সকল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভব নয়। এসকল সমস্যার সমাধান হিসেবে অনেক সুপারিশও আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসে। ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যাবসায়ীদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হিসেবে বলা হয় যাতে ব্যবসায়ের কিছু মূলধন বা সঞ্চয় আলাদা করে রাখা হয় যাতে করে ভবিষ্যতের সংকটে তা ব্যবহার করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। কোন প্ল্যাটফর্ম নেই এবন এই ক্ষেত্রে সোস্যাল মিডিয়া তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও ব্যবসা জোরদার করতে উদ্যোক্তাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা দরকার যাতে করে নিজ উদ্যোগে ট্রেইনিং ও গাই নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। উপরন্তু গণমাধ্যমকে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের ব্যবসায়ীদের পাশে দাড়াতে হবে, করে নতুন উদ্যোক্তাদের সাথে যাতে করে নতুন ব্যবসাগুলো সম্প্রসারণ হতে পারে।
অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ড. মো. মাহবুব সিদ্দিকী এবং গণমাধ্যমের প্রাতিনিধি আকবারুল হাসান মিল্লাত আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।