পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ১৯৯৬ সালে নিজের হাতে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ইমরান খান।
দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বেশ আগে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) একটি অভিযোগ এসেছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে ‘নিষিদ্ধ উৎস’ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছিল পিটিআই।
দীর্ঘদিন এই অভিযোগটি নিয়ে নির্বাচন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। তবে সম্প্রতি এ ইস্যুতে ইসিপি তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে, যদি কোনো রাজনৈতিক দল বিদেশি কোনো উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং যদি তা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে। পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ রয়েছে এবং সেটিরই তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া গত ৯ আগস্টের দাঙ্গা এবং রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মামলা চলছে ইমরান খান এবং পিটিআইয়ের প্রথম সারির কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে। সেই মামলার রায়ও তাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যদি এসব মামলায় ইমরান ও তার দলের জেষ্ঠ্য নেতারা দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হবেন তারাও। ফলে সার্বিক ভাবে এক চরম অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে পিটিআই।
২০২২ সালের ২৭ মার্চ এক জনসভায় ইমরান খান একটি চিঠি প্রদর্শন করে বলেছিলেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে এবং এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর যে তারবার্তা আদানপ্রদান চলছে, তার প্রমাণ এই চিঠিতে রয়েছে। তারপরই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস (সাইফার) মামলা দায়ের করা হয়।
তারপর ২০২৩ সালের ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বরে ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা এবং পাকিস্তানের ইতিহাসে সেবার প্রথমবারের মতো সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দলের সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ইমরান খান ও তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে পাকিস্তানের একাধিক আদালতে।
‘পিটিআই নিষিদ্ধ হচ্ছে’ এই সংবাদটি অবশ্য পাকিস্তানের অপর দুই বড় রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)সহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দলের জন্য সুখবর। কারণ এই মুহূর্তে পিটিআই পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এবং ইমরান খান এখনও দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। বস্তুত, এখন পর্যন্ত পিটিআই এবং ইমরানের যে জনপ্রিয়তা— পিএমএলএন এবং পিপিপি তার ধারে কাছেও নেই।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য এবং পিএমএলএন নেতা শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকারের আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী আজম নাজির তারার অবশ্য মনে করেন, নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকলেও শিগগিরই পিটিআইকে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে না।
‘এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো টালমাটাল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনা। লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাপক সংকটে রয়েছেন সাধারণ জনগণ। এই সংকটের সুরাহা হওয়া এখন সবচেয়ে জরুরি,’ সাংবাদিকদের বলেছেন আজম নাজির তারার।
সূত্র : এনডিটিভি ও ঢাকা পোস্ট