মধুমাস জৈষ্ঠ্যের শুরুতেই অপেক্ষার প্রহর কাটলো। বছর ঘুরে আবারও বাজারে এলো বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহীর আম। বেঁধে দেওয়া সময় মেনে বুধবার (১৫ মে) থেকে বাগানের আম নামানো শুরু হয়েছে। আজ প্রথম দিন বাগান থেকে নামানো হয়েছে গুটি জাতের আম। আর জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম দিন পরিপক্ব হওয়া গুটি জাতের এই আম সংগ্রহের মধ্য দিয়েই মৌসুমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।
এর আগে রাজশাহীতে আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। অসময়ে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখতে গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার থেকে গুটি জাতের আম নামাতে পারছেন চাষিরা। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশনানুসারে, এ বছরের ১৫ মে থেকে আমের মৌসুম চলবে পুরো আগস্ট মাস পর্যন্ত। তবে এবার তীব্র তাপপ্রবাহ ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে রাজশাহীতে আমের ফলন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই আজ অনেকটা সীমিত আকারেই আম পাড়া শুরু হয়েছে। সব গাছের গুটি আম এখনও ভালোভাবে পরিপক্ব হয়নি। তাই একসঙ্গে সব বাগানে গুটি আম পাড়াও শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
মহানগরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে অল্পসংখ্যক চাষি ও ব্যবসায়ী আম পাড়ছেন। কারণ এখনো অনেক বাগানের গুটি আম পরিপক্ব হতে শুরু করেনি। এই আম পরিপক্ব হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের আমচাষী নুরুল আমিন বলেন, কয়েক বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে আজ। এই আম তারা রাজশাহী সদর এবং পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে নিয়ে যাবেন। তবে আজ খুবই অল্প পরিসরে আম নামানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে গুটি আম গাছ থেকে ভাঙা শুরু হবে বলেও জানান।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন জানান, আজ প্রথম দিন কেবল আনুষ্ঠানিকতা সারছেন স্থানীয় আম চাষি ও বাগানিরা। পুরোদমে গুটি জাতের আম নামতে শুরু করবেন আগামী সপ্তাহ থেকে। আর সুস্বাদু গোপালভোগসহ অন্যান্য আম নামবে আরও ১৫/২০ দিন পর। জেলা প্রশাসন সময় বেঁধে দিলেও তারা তাদের সময়-সুযোগ ও পরিস্থিতি বুঝে পরিপক্ব হওয়ার পরই গাছ থেকে আম নামাবেন।
এর আগে ১২ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর গুটি আম নামানো যাবে ১৫ মে থেকে, গোপালভোগ ২৫ মে থেকে, লক্ষ্মণভোগ (লকনা) ও হিমসাগর (ক্ষীরশাপাত) ৩০ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া আগামী ১০ জুন থেকে সবার প্রিয় মিষ্টি আম ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম নামবে। ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ আম, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। আর নতুন জাতের উদ্ভাবিত কাটিমন ও বারি-১১ আম পরিপক্ব সাপেক্ষে বছরজুড়েই পাড়া যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোছাম্মত সাবিনা বেগম বলেন, রাজশাহী আজ গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। আর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যই হচ্ছে আম। তাই বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের আগে যদি কোনো কৃষক বা ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম নামান তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি মনিটরিং করতে রাজশাহীর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনাররাও বিষয়টি দেখভাল করবেন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে যদি কোথাও আম পাকে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আম নাও পরিপক্ব হতে পারে। সেই জন্য আমচাষি ও বাগান মালিকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিজ বাগানের আম পরিপক্ব হওয়া সাপেক্ষেই সেগুলো নামাতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময়ের অনেক পরে আম নামালেও কোনো সমস্যা নেই।
বাংলানিউজ