ভারতে ভারী বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। এ ছাড়া বেড়েই চলেছে জেলার অন্য নদ-নদীর পানি। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কাউনিয়া ও ডালিয়া পয়েন্টে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবোর বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার (১ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার দুপুরে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গংগাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। বেশকিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ডুবে গেছে ওইসব এলাকার সবজিখেত।
পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গংগাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদরাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এ ছাড়া কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সেখানে নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে, যাতে বন্যায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট