ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সুযোগ হাতছাড়া হতে দেব না, নতুন যুগের সূচনা করতে চাই – ইউনূস

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ । ৬৭ জন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা আহত হয়েছেন তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবার বিষয়টি তার সরকারের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, আহত শতশত মানুষের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা এবং শহীদ পরিবারের দেখা শোনার জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে আছে।

আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য ক্রমাগত কাজ করছেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মূল তালিকা হয়ে গেছে। এখন শুধু দূর -দূরান্তে যাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলিতে পূর্ণাঙ্গতা দেয়া হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক লিখিত বার্তায় একথা জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হল বিপ্লবের সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। হাসিনার দুর্বৃত্তরা তাদের চোখ লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ায় অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে”।

“তারা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে যার নেতৃত্বে নৃশংস একটি গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র এবং একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আমাদের বাংলাদেশকে এর পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের”।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, “যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন সে সুযোগ আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেব না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বোই”।

তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়েছে তা পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলে, “ শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই”।

তরুণদের এখন ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার”।

অন্তর্বর্তী সরকারের একমাসের কাজ তুলে ধরে বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এদেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন”।

দেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে চান উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি”।

সম্প্রতি বলপূর্বক গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতি’র সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি”।

বিবিসি

Paris
Paris