ঢাকাবুধবার , ২ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নামে মীমাংসায় ডেকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা

অক্টোবর ২, ২০২৪ ৭:৪৬ অপরাহ্ণ । ১৮ জন

জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নাম করে মীমাংসায় ডেকে বেধড়ক মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানা এলাকার নারিকেল বাড়িয়া কৃষি ব্যাংকের মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. শহিদুল শেখ, মো. ওবায়দুল শেখ, মো. হাসান ও মো. রহমান শেখের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) নগরীর চন্দ্রিমা থানায় এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী তুহিন শেখের (৫৫) স্ত্রী মোছা. কাজল বেগম (৪৪)।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রিমা থানার নারিকেল বাড়িয়া এলাকায় তুহিন শেখ সফর আলী নামের এক ব্যক্তির কাছে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল আমমুক্তার নামা বলে ০.২০৯৭ একর জমি বিক্রয় করে। জমিটি বিক্রয়ের কথা জানার পর থেকে তুহিনের মামা ওবায়দুল শেখ সেখানে টিনের বাড়ি তুলে নিজ দখলে রাখার উদ্দেশ্যে বসবাস শুরু করে। তুহিন একাধিকবার তার মামাকে সেখানে থেকে উঠে তার নিজ বসতভিটায় যেতে বললেও তিনি শোনেন না। উল্টো তুহিনকে তার বাকি ৬ ভাই এবং তাদের ছেলে-মেয়ে সহ মারধর করে তাড়িয়ে দেন এবং জমির অধিকার দাবি করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। সম্প্রতি ২৮ সেপ্টেম্বর তুহিনের কাছে থেকে কেনা জমিটি ক্রেতারা দেখতে গেলে তুহিনের মামারা ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করেন এবং জমিটি তাদের বলে দাবি করেন। তারা জানায়, তুহিনকে তাদের কাছে নিয়ে আসলে তারা মীমাংসায় বসবে। ২৯ সেপ্টেম্বর তুহিন সহ ক্রেতারা ঘটনাস্থলে গেলে কোনো কথা বলার পূর্বেই তুহিনের ৭ মামা, মামি ও তাদের মামাতো ভাই-বোনেরা এলোপাথারি মারধর করে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মো. কামরুজ্জামান শাওন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘তাকে (তুহিনকে) প্রায় ৪০ জন মিলে বাঁশ, লাঠি, লোহার পাইপ, হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমের একটি চলা দিয়ে মাথায় বাড়ি দিলে তা দ্বিখন্ডিত হয়ে যায় এবং পরক্ষণে তুহিন জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পাশের বাড়ি থেকে তার জ্ঞান ফেরানোর জন্য স্টিলের বালতিতে পানি আনলে তার ভেতরেই চেপে ধরে হত্যাচেষ্টা করা হয়। পরে পানি ফেলে স্টিলের বালতি দিয়ে তারে পেটানো হয়। এমনকি তাকে ধরে বাড়ির ভেতর নিয়ে গিয়ে জবাই করার চেষ্টাও করে তারা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা তাকে মামাদের হাত থেকে উদ্ধার করে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে’।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ও জমির বর্তমান মালিক সফর আলী  বলেন, ‘ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন না থাকলে তাকে (তুহিন) মেরেই ফেলতো তার মামারা। তাকে প্রতারণাপূর্বক ডাকা হয়েছে। কপালের জোরে সে বেঁচে ফিরেছে। তিনি আরও বলেন, ২৯ এপ্রিল মাটি কেনার পর ২৫ জুন আমি জমিতে গেলে আমাকেও তারা মারার হুমকি সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এনিয়ে আমি ২৬ জুন থানা একটি অভিযোগও করেছি তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাকে এখন পর্যন্ত কোনো শুরাহা মেলেনি’।

ভুক্তভোগী তুহিনের ভাষ্য, ‘বাবা-মা মারা যায় প্রায় ৪০ বছর আগে। আমার মায়ের নামে কোনো ভিটা-মাটি ছিল না, যা ছিল সব বাবার সম্পত্তি। সে সম্পত্তিগুলো আমি পায়। তখন আমার বয়স ১৪-১৫ বছর। সে সময় মামারা সম্পত্তিগুলো দেখভাল করত। কিন্তু বাবা-মায়ের মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যেই মামারা আমাকে মারধর করত। সাবালক হওয়ার পর তারা আমার সম্পত্তি জোরপূর্বক লিখে নিতে চায়। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় আমাকে হত্যার চেষ্টাও পর্যন্ত করে। পরে আমি পালিয়ে প্রাণরক্ষা পায়। কিন্তু তারা যুগের পর যুগ আমার বিঘা বিঘা সম্পত্তি অবৈধভাবে ভোগদখল করে খাচ্ছে, আমাকে তা ফেরত দিচ্ছে না’। তিনি আরও বলেন, ’২৯ তারিখে আমাকে প্রতারণা করে ডেকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে কিছু মানুষ আমাকে উদ্ধার করায় প্রাণে বেঁচে যায়’।

ভুক্তভোগী তুহিন শেখের স্ত্রী কাজল বেগম বলেন, ‘আমার মামা শ্বশুড় এবং তার ছেলে-মেয়েরা জমির কে গেলেই তাকে মারধর করে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তারা একাধিকবার আমার স্বামীকে হত্যাচেষ্টা করেছে। আ.লীগ সরকার থেকে নামার পর তারা স্থানীয় এক জামাত নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পুণরায় কৌশলে ডেকে হত্যা চেষ্টা করে। এখন যেনো থানায় মামলা না করি এনিয়ে বার বার লোকমুখে এবং ফোনে তারা হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এনিয়ে আমরা পুরো পরিবার বেশ আতংকের মধ্যে আছি’।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দ্রিমা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সিরাজ। তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্বশত্রুতার জের ধরে দীর্ঘদিন যাবত সমস্যা চলে আসছে তুহিন শেখ ও তার মামা, মামি এবং মামাতো ভাই-বোনদের সাথে। এরই জের ধরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে তুহিন শেখকে জমি নিয়ে মীমাংসার কথা বলে ডেকে তাকে গুরুতর মারধর ও হত্যাচেষ্টা করা হয় মর্মে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষ ও আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

Paris