রাজশাহী মহানগরের মেহেরচণ্ডি এলাকায় থাকা নিজ স্টুডিওতেই মুক্তিযোদ্ধার দুটি ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিন জোসি। কিন্তু কোথাও স্থাপন করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মনের আক্ষেপে ভাস্কর্য দুটি নামমাত্র দামে বিক্রি করে দিয়েছেন ভাঙারির দোকানে।
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য দুটি এখন বিনোদপুর বাজারের ওই ভাঙারির দোকানে পড়ে আছে বিক্রির অপেক্ষায়। ভাস্কর্য দুটি জিআই তার দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর ভাঙারির ওই দোকানটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যাতায়াতের সময় ভাস্কর্য দুটি পড়ছে সবার নজরে।
মহানগরের বিনোদপুর বাজারে থাকা ওই ভাঙারির দোকানটির নাম ‘খোকন আয়রন ঘর’। অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিনের স্টুডিও থেকে ভাস্কর্য দুটি খোকন নামের এই ব্যবসায়ী কিনে নিয়ে এসেছেন। এখন তিনি আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। কেউ না কিনলে ভাস্কর্য দুটি ভেঙে লোহা হিসেবে কেজি দরে বিক্রি করবেন। আর তার দোকানের সামনে পড়ে থাকা ভাস্কর্য দুটির ছবি ও ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী খোকন জানান, ভাস্কর্য সম্পর্কে তার জানাশোনা নেই। তিনি সাধারণত বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙারি হিসেবে কেজি বা ঠিকা দরে কেনা-বেচা করে থাকেন। আর এ দুটি ভাস্কর্য ভেতরে লোহার বিম দিয়ে জালি করা আছে। এর বাইরের অংশটা মজবুত এসএস পাইপ এবং স্টিল দিয়ে তৈরি। এটায় কখনো মরিচা ধরবে না। উচ্চতায় এটি প্রায় ১৮ ফুট। এর ভালো দাম পাওয়া যাবে। তাই তিনি কিনে নিয়ে এসেছেন। এখন বিক্রির অপেক্ষায় আছেন। দুটি ভাস্কর্যের জন্য ২ লাখ টাকা দাম আশা করছেন। এর আশপাশে দাম মিললেই তিনি ভাস্কর্য দুটি বিক্রি করে দেবেন।
কয়েক বছর ধরে ধাপে ধাপে ভাস্কর্য দুটি বানিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিন জোসি। তবে শেষ পর্যন্ত কোথাও স্থাপন করতে না পেরে নামমাত্র দামে ভাস্কর্য দুটি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
ভাস্কর আমিরুল মোমেনিন জোসি জানান, মহানগরের মেহেরচণ্ডি এলাকায় থাকা নিজের স্টুডিওতে লম্বা সময় ধরে ভাস্কর্য দুটি তৈরি করেছিলেন। তবে কোথাও স্থাপন করতে না পেরে একরকম আক্ষেপ নিয়েই স্থানীয় ভাঙারির দোকানে ভাস্কর্য দুটি মাত্র ৯ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ এগুলো তৈরিতে তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, দেশজুড়ে আমার ও আমার শিক্ষার্থীদের তৈরি করা প্রায় ২০০ ভাস্কর্য ছিল। অনেক জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও ছিল, সেগুলো আমার বা আমার শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি। টেলিভিশনে দেখেছি, এর অনেকগুলো ভাস্কর্যই গত ৫ আগস্ট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন শিল্পীর জন্য এটা কষ্টের। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য দুটি কোথাও বিক্রি করা সম্ভব না। কোথাও স্থাপন করা সম্ভব বলেও মনে করি না। তাই ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছি। বলে বোঝানো যাবে না যে, এটা শিল্পীর জন্য কতটা কষ্টের। বাংলানিউজ