গ্রীনসিটি ডেস্ক:
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস তখন ১৯৯ রানে অপরাজিত। অফ স্পিনার নাঈম হাসান ১৫৩তম ওভারের শেষ বলটা করার আগে শ্রীলঙ্কা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলতে ফিল্ডিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনলেন। বাইরে থাকা মিড অন, মিড অফ ও মিড উইকেটকে ৩০ গজে এনে সিঙ্গেল নেওয়াটা কঠিন করে তোলাই ছিল নাঈমের লক্ষ্য।
টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল শতক থেকে এক রান দূরে থাকা ম্যাথুসকে যেন ঘিরে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডাররা। অভিজ্ঞ ম্যাথুসও মুহূর্তের জন্য চাপটা অনুভব করলেন। তাতে মনোযোগও হারালেন তিনি। নাঈমের করা লেগ স্টাম্প লাইনের বলটি ক্রিজ ছেড়ে লেগ সাইডে ঠেলে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন স্কয়ার লেগে থাকা সাকিবের হাতে।
![৬ উইকেট পেয়েছেন নাঈম হাসান](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-05%2Fcba845cd-076e-4807-84df-f3f7189caf24%2FReaction_after_Naeem_s_6th_wicket_during_1st_test_BD_vs_Sri_Day_2_____7.jpg?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
এরপর নাঈম ও বাংলাদেশ দলের উল্লাস আর দেখে কে! নয় ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের প্রচেষ্টা যে অবশেষে সফল হলো। ৩৯৭ বল খেলে ১৯৯ রান করা শ্রীলঙ্কার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে এতটা দীর্ঘ সময়ই ক্রিজে ছিলেন ম্যাথুস! তাঁর ম্যারাথন ইনিংসের কারণে শ্রীলঙ্কাও ১৫৩ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পেরেছে। সফরকারীদের প্রথম ইনিংস স্কোর ৩৯৭ রানে গিয়ে ঠেকেছে এক ম্যাথুসের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে।
১৯টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসই যে বাংলাদেশ দলের অপেক্ষাটা বাড়িয়েছে। ব্যক্তিগত ৩৮ রানের সময় রিভিউ নিয়ে একবার রক্ষা পেয়েছিলেন ম্যাথুস। ৬৯ রানের সময় তাইজুল ইসলামের বলেও আউট হতে পারতেন। কিন্তু স্লিপে থাকা মাহমুদুল হাসান ক্যাচ ছাড়ায় নবজীবন পান ম্যাথুস। আজ সকালে ১১৯ রানের সময়ও আউট হতে পারছেন। খালেদ আহমেদের বলে কট বিহাইন্ড হলেও বাংলাদেশ দলের বোলার ও ফিল্ডাররা কেউই আবেদন করেননি।
![ম্যাথুস একটুর জন্য মাইলফলক ছুঁতে পারেননি](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-05%2F059029d9-b1ce-4b36-8537-9518cd45d73f%2FMathews_Of_Sri_Players_battnig_during_1st_test_BD_vs_Sri_Day_2_4.jpg?auto=format%2Ccompress&format=webp&w=640&dpr=1.0)
টেস্ট ক্রিকেটে ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হলেন ম্যাথুস। তবে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ব্যাটসম্যানের ১৯৯ রানে আউট হওয়া এই প্রথম। ১৯৯ রানে আউট হওয়ায় ম্যাথুসের পূর্বসুরি ১১ জন: মুদাসসর নজর, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, ম্যাথু এলিয়ট, সনাৎ জয়াসুরিয়া, স্টিভ ওয়াহ, ইউনিস খান, ইয়ান বেল, স্টিভ স্মিথ, লোকেশ রাহুল, ডিন এলগার ও ফাফ ডু প্লেসি। এছাড়া ১৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও কুমার সাঙ্গাকারা।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসের গল্পে যদি ম্যাথুস নায়ক হন, তাহলে বাংলাদেশ ইনিংসের নায়ক নাঈম হাসান। প্রথম দিন ২ উইকেট নিয়েছিলেন, আজ এর সঙ্গে আরও ৪ উইকেট যোগ করেছেন এই অফ স্পিনার। ক্যারিয়ারে এটা তাঁর তৃতীয় ৫ উইকেট, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়।
দিনের শেষ সেশনে মাথার আঘাতে রিটায়ার্ড হার্ট বিশ্ব ফার্নান্ডোর বদলি হিসেবে ব্যাটিং করতে নামেন আসিথা ফার্নান্ডো। ইনিংসের ১৪৮তম ওভারের পঞ্চম বলে দুর্দান্ত এক অফ স্পিনিং ডেলিভারিতে আসিথাকে বোল্ড করে দিয়ে পঞ্চম উইকেট পেয়েছেন নাঈম। এরপর বিশ্ব আবারও ব্যাটিংয়ে নামলে তাঁকে নিয়েই শ্রীলঙ্কাকে চার শ রানে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেন ম্যাথুস। সঙ্গে নিজের ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক তো ছিলই। নাঈম সেটি আর হতে দেননি।
নাঈম সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আঙ্গুলের চোটের সঙ্গে লড়ে খেলে গেছেন তিনি। এরপর টেস্ট দলে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। এ বছরের নিউজিল্যান্ড সফর থেকে টেস্ট দলেও জায়গা হারিয়েছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ চোটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলে সুযোগ পেয়ে যান নাঈম। সেই সুযোগটাই দারুণভাবে কাজে লাগালেন তিনি। ৩০ ওভারে ১০৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রত্যাবর্তনটা রাঙিয়েছেন চট্টগ্রামেরই ঘরের ছেলে।
প্রথম আলো