ঢাকাবুধবার , ১৪ জুন ২০২৩
  • অন্যান্য

নাজমুলের দিনে এলোমেলো আফগানিস্তান

জুন ১৪, ২০২৩ ৭:৩২ অপরাহ্ণ । ২০৭ জন

প্রায় দুই বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে এমন একটা দিনের আশা নিশ্চয়ই করেনি আফগানরা। নাজমুল হোসেনের ১৪৬, মাহমুদুল হাসানের ৭৬ রানের ইনিংসে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনই ৫ উইকেটে ৩৬২ রানের বড় স্কোরে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের গড়ে দেওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে মুমিনুল হক বা লিটন দাস ইনিংস বড় করতে পারেননি, তবে এখনো অপরাজিত আছেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের জুটি অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানে, ৪৩ রানে ব্যাটিং করছেন মিরাজ, মুশফিক অপরাজিত ৪১ রানে।

মিরপুরের সবুজাভ উইকেট আলোচনায় ছিল ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই। সঙ্গে গত কয়েক দিনে ঢাকায় হয়ে যাওয়া বৃষ্টির কারণে টসে জিতে ফিল্ডিং নেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি, আট বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে কোনো টেস্টে টসে জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল কোনো দল। মিরপুরের উইকেট বেশ ব্যাটিং সহায়ক ছিল তা বলা যাবে না। তবে বেশ আর্দ্র দিনে অনভিজ্ঞ আফগানদের বোলিং উইকেট থেকে সুবিধা আদায়ের মতো ছিল না কোনোভাবেই।

তাদের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল দারুণ। ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নিজাত মাসুদের কাছে মনে হওয়ার কথা স্বপ্নের মতোই। ইনিংসের সপ্তম বলেই ব্রেকথ্রুর দেখা পেয়ে টসে জিতে বোলিং নেওয়া অধিনায়কের মুখেও হাসি ফোটার কথা। জাকির হাসানকে আউট করা পেসার নিজাতের ডেলিভারিটিও ছিল দারুণ, লেগ স্টাম্প লাইনে পড়ে অফ স্টাম্পঘেঁষা লাইন দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলেই খোঁচা দেন জাকির। ৭ বছর পর টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পেলেন কোনো বোলার, বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন ঘটল মাত্র দ্বিতীয়বার।

অবিচ্ছিন্ন থেকে দাপুটে দিন শেষ করলেন মুশফিক ও মিরাজ

তবে নিজাতের অমন ডেলিভারির মতো আর কিছুর দেখা শিগগিরই আফগানিস্তান আর পেল কই! স্পিনাররা এলোমেলো লাইন-লেংথে করা শুরু করলেন, পেসাররাও ঠিক করতে পারেননি সেটি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নো বলের বাড়াবাড়িও। এমনকি ইনিংসে দৌড়েই ৫ রান নেওয়ার ঘটনাও আছে। অনভিজ্ঞ আফগান বোলারদের ওপর নাজমুল চড়াও হন শুরু থেকেই। মাহমুদুলের সঙ্গে নাজমুলের প্রথম ৫০ রানের জুটিতে দুজন ছিলেন বিপরীতমুখী। নাজমুল শুরুটা করেন ঝোড়ো, মাহমুদুল চলছিলেন ধীরলয়ে।

মধ্যাহ্নবিরতিতে যাওয়ার আগেই ৫০ পেরিয়ে যান নাজমুল। বাংলাদেশ পেরোয় ১০০, মাহমুদুল-নাজমুলের জুটিও তাই। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ তোলে ৪.৮৩ হারে রান, বিরতির পরও চিত্রটা খুব একটা বদলায়নি। সে সময় ১০ বলের মধ্যে নাজমুল মারেন ৫টি চার। নাজমুল ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে, মাহমুদুল ছিলেন ফিফটির পথে। কে আগে মাইলফলকে যাবেন, সেটি নিয়ে একটা দৌড়ও চলে। যদিও সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ধীরে চলেন ১০৬ বলেই ৯৬ রান করা নাজমুল। সেঞ্চুরি করতে তাঁর লাগে ১১৮ বল। এর আগেই ফিফটি পান মাহমুদুল। নাজমুলের এটি তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি, দেশের মাটিতে প্রথম। মাহমুদুলেরও এটি তৃতীয় ফিফটি।

নাজমুল-মাহমুদুলের জুটি ভাঙতে হাশমতউল্লাহ নিজে তো আসেনই, এরপর আনেন আরেক পার্ট-টাইমার রহমত শাহকেও। লেগ স্পিনার রহমতই ভাঙেন ২১২ রানের জুটি, দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অবশ্য আউটের ধরনে নিজের ওপর হতাশ হতেই পারেন ৭৬ রান করা মাহমুদুল, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। রহমত ওই ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান মুমিনুল হককেও চাপে ফেলেন, তবে সেটি ধরে রাখতে পারেননি। ২ উইকেটে ২৩৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। নাজমুলকে তখনোই যেন উঁকি দিচ্ছিল ডাবল সেঞ্চুরি, বাংলাদেশও এগোচ্ছিল বেশ বড় স্কোরের পথেই।

তবে বাংলাদেশের ছন্দপতন হয় মুমিনুলের আউটে। নিজাতের লেগ স্টাম্পের ওপরের শর্ট বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড হন মুমিনুল, ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো রিভিউ নিয়ে উইকেট পায় আফগানিস্তান। এরপর আফগান স্পিনারদের দায়মোচনের পালা। অবশ্য তার আগেই নাজমুলের উইকেট পেতে পারতেন নিজাত, তাঁর বল স্টাম্পে ডেকে এনেছিলেন বাংলাদেশের সেঞ্চুরিয়ান। নো বলে উইকেট—ইনিংসের গতিবিধি খেয়াল করলে সেটিকে সময়ের অপেক্ষাই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু নাজমুল ইনিংস বড় করতে পারেননি আমির হামজাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে তুলে মারতে গিয়ে। ২৩টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারা নাজমুল মারতে গিয়েছিলেন আরেকটি, তবে টাইমিং আর প্লেসমেন্ট ঠিকঠাক করতে পারেননি। মুমিনুলের পর নাজমুল ফেরেন ১৫ রানের মধ্যেই। এমন পরিস্থিতি লিটন দাসের জন্য আদর্শ মঞ্চ হতে পারত ঝোড়ো ইনিংসে, তবে ঠিক থিতু হওয়ার আগেই জহিরের গুগলি পড়তে ব্যর্থ বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সে চাপটাও আফগানরা ধরে রাখতে পারেনি। মুশফিক ও মিরাজ খেলে গেছেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। ওভার রেটে বেশ পিছিয়ে ছিল আফগানিস্তান, আম্পায়াররা শেষ সেশনে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত খেলা চালান। তাতে বাংলাদেশের স্কোরই আরেকটু ফেঁপে উঠেছে। আগামীকাল ১ ওভার পরই দ্বিতীয় নতুন বল পাবে আফগানিস্তান, নিশ্চিতভাবেই তাতে ভাগ্য বদলানোর আশা থাকবে তাদের। আর ৭৯ ওভারেই ৩১টি অতিরিক্ত রান দেওয়ার ব্যাপারেও ভাবার কথা তাদের।

প্রথমআলো